সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিতানের মা- চিত্রলেখা চক্রবর্তী


 

শুনুন আমার ছেলে বিতান ।  প্রফেসারী  করে দিল্লীর আই আই টি তে । ওর চাকরী করার শখ কোনোদিনই ছিল না । সব সময় আমাদের কে বলতো গবেষণা করবে ।  তাই  প্রফেসারী করে আর নিজের গবেষণার দেখভাল নিজেই করে । মা হিসেবে  ওর খাওয়া দাওয়া যত্নাত্তির  টুকুতে ‌কোনো ত্রুটি রাখিনি ।  ।  সবসময় ওর সাথে বন্ধুর মতো মিশেছি । ওকে বোঝার চেষ্টা করেছি ।  এটা আমার কর্তব্য বন্ধুর মতো বাচ্চাদের সঙ্গে মেশা ।তাই আমাদের মা বেটার সম্পর্কটা বেশ জমকালো । হুম পড়াশোনাটা ওর বাবা দেখে । আমি পড়াশোনাতে ভালো ছিলাম না । যদিও ভূগোলে স্কুলে সর্বোচ্চ নাম্বার টা আমি পেতাম । ওই আঁকতাম প্রচুর । ক্লাস এগারো   বাবা দেখলো ছেলে । সুপাত্তর পেয়ে গেল । ঘটা করে দিল বিয়ে । বিয়ের পর স্কুল ছেড়ে দিলাম ।যদিও আমার উনি বলেছেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে।  ভালোবাসা , ভালো থাকার একটুও কমতি নেই ।   হল একবছরের মধ্যে বিতান । এই টি আমার একটাই মানিক্য । সব শুধু এই আমার পুত্তুর কে ঘিরে । সু পুত্তুর ও তত্তর করে বেড়ে উঠলো । আমার ও বয়স বাড়তে লাগলো । তবে স্কুল ছেড়েছি সে তো হলো । কিন্তু ওই স্কুল জীবন এর বন্ধু গুলো ওই বদমাশ গুলো কে কি আর ভোলা যায় বলুন ? কিন্তু কত কত বছর যোগাযোগ নেই । ফোন আমার কাছে আছে কিন্তু ওদের কারো নাম্বার আমার কাছে নেই । মনে তো পড়ে কিন্তু এই যোগাযোগ এর পথ খোলা নেই ।  


(ফোনের আওয়াজ)এক মিনিট থামুন ।


ফোনটা ধরেই দেখলাম ছেলের ফোন । ধরলাম ফোনটা । চিৎকার করলো হতভাগা । উফফ কান জ্বালিয়ে দিল ।  বন্ধু তো, তাই একেবারে ফ্রেন্দস টাইপের ব্যাপার স্যাপার ।

শুনুন আর কিছুক্ষণ বাদেই আমার জন্য একটা পার্সেল আসছে । হতভাগা বললো  যে মা তোমার মনের কথা আমি বুঝি বুঝি । খুব  মনে পড়ে মাঝে মাঝে তোমার ওই সখা সখিদের কথা । তোমার স্কুলের ওই হাম্পি ,রিম্পি ,ঝিমকি,বাবলু ওদের সাথে যোগাযোগ না থাকার  অবসান ঘটবে এবার দাঁড়াও । পার্সেল টা নিয়ে রেখো খুলবে না । পড়শু আসছি যন্তরের সমস্ত শিখিয়ে দেবো । তারপর তোমায় দেখে কে । হুম তবে একটা শর্তে ওমা একটা সুন্দরী দেখো না । একা একা আর ভালো লাগে না । দেখো না , দেখো না । এপাশ থেকে মিচকে হাসলাম । ফোনটা রাখলাম । 


বুঝলেন কিছু । আমার হতভাগার মনের অবস্থা? আমাদের সম্পর্ক? ছেলে ,আমার শিক্ষক হবে । 

পাত্রী দেখা শুরু করলাম । আপনাদের তহবিলে পাত্রী থাকলে খোঁজ দেবেন ।   আর হ্যাঁ নেমন্তন্ন র‌ইল আগেভাগেই।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ঝড়ের আড়ালে- দোলা সাহা

  অসহায় স্তব্ধতায় বুক দুরু দুরু; ক্ষনিক আশা যাহা ছিল মনে, ভাঙিল তা প্রবল করাঘাতে। বেদনার গ্লানি, আর শোকাতুর মন বাধিল ক্ষনিক আশা একটু স্নেহের পরশ জরাহীন ভারতবর্ষ মুক্ত করো সবে হারিয়ে যেতে দেবনা আমরা গভীর অন্ধকারে শত শত ক্ষত ভরিয়ে তুলব- গভীর মমতায় ভরা স্নেহের প্রলেপে।

অন্য পুজো - পিনাক

  ১ অনেকদিন ধরেই ছেলেটা বায়না ধরেছে এবার পূজোয় একটা নতুন জিন্সের প্যান্টের জন্য। বছরদুয়েক আগে ওর বাবা অন্ধ্রে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়েছিলো, তারপর থেকে আর ফেরেনি। এখনো পর্যন্ত তার কোনো খোঁজখবরও পাইনি সে।পাঁচবাড়ি দুইবেলা কাজ করে কোনোমতে সংসারটা টেনেটুনে চলে যায় আর মিডডে মিলের দয়ায় ছেলের একবেলা পেটটা কোনোরকমে ভরে যায় রোজ। অনেক ইতস্তত করে আজ বড়বাড়ির বৌ এর কাছে পাঁচশ টাকা চেয়েই বসেছিল ফুলমনি ছেলের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। অনেকদিনের বিশ্বস্ত লোক, দু'বছরে একদিনও কামাই করেনি:বড়বাড়ির বৌ তাই টাকার কথাতে একবারের বেশী দুবার ভাবেনি।  আজ বিকেলে মনটা বেশ খুশি ছিল ফুলমনির। টুসিদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ি না ফিরে সোজা চলে গিয়েছিল বড়রাস্তার ধারে কাঁচের দরজা দেওয়া জামাকাপড়ের দোকানটার দিকে। রাস্তায় গাড়ি বেশী ছিলো না তখন; দোনোমোনো করে রাস্তাটা পেরোতে গিয়েছিল সে। বকুলতলার দিক থেকে বিকট শব্দ করে হঠাৎ একটা গাড়ি চলে আসে দানবের মতো! তারপর... মায়ের ডাকে ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে যায় পল্লবের! ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে সে বিছানায়... ২ ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে শ্যমলকে বাইক চালিয়ে রোজই ফিরতে হয় অফিস থেকে। আজ অফিস থেকে বেড়িয়ে অফিসের ...

পচন- মনোজ কুমার সরকার

  আজ যে কাহিনীর অবতারণা করতে চলেছি পাঠকের কাছে তা নিছক একটি গল্প হলেও আসলে আমার জীবনেই এই বিচিত্র ঘটনাটি ঘটেছিল। অন্তত সেদিন একবিংশ শতাব্দীর যুক্তিবাদী শিক্ষিত মানুষ হওয়া সত্বেও আমি এই ঘটনার জটিল রহস্যের কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। সেই বিচিত্র ঘটনার দর্শকের ভূমিকা নেওয়া ছাড়া সেদিন আমার আর কিছুই করার ছিল না। বছর দশেক আগের কথা। সেবার গ্রীষ্মের ছুটিতে গেলাম মামার বাড়ি বেড়াতে ।মা, বাবা, ভাই ও আমি অর্থাৎ সপরিবারে ।আমার মামাবাড়ী রানাঘাটে কাপাস ক্যাম্পের কাছাকাছি হরিনাথপুরে। হরিনাথপুর একটি ছোট কলোনি বিশেষ ।দেশভাগের পর বহু ছিন্নমূল মানুষ সেখানে পাকাপাকি তাদের বসতি স্থাপন করেছিল। দিদিমা প্রায়ই বলতেন এখানে আগে ছিল শুধুই জল কচুর বন আর আঁশ শেওড়ার ঝোপ। এমনকি আমি নিজেও ওই অঞ্চলে গিয়ে বেশ কিছু পরিত্যক্ত জলা জমি দেখেছি। প্রোমোটারের নেক নজরে পড়লে সেখানে হয়তো ফ্ল্যাটবাড়ি উঠতে পারত। এমনিতে হরিনাথপুর জায়গাটা আমার ভীষণ প্রিয়। আমরা কলকাতার মানুষ। গ্রামবাংলায় আসি একটু টাটকা বাতাসের খোঁজে, আর হরিনাথপুরে সেসব অফুরন্ত। এমন একটি চমৎকার জায়গায় এসে এত ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হবে যদি আগে জানতাম তাহলে সে...