সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ছোটগল্প লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ডুব দে রে মন...- বন্যা ব্যানার্জী

ঝন ঝন শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো তারক নাথ ওরফে তারু র।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা আন্দাজ করে নিল সে। হুম ! মহারানীর মর্নিং ওয়াকে যাবার সময় এখন।তাই ঘুমন্ত বর কে চাবি ঝনঝনিয়ে জাগানোর চেষ্টা।সারাদিন অফিসে গাধার খাটনি,একটু যে আয়েশ করে রাতের ঘুম টুকু দেবে সে উপায় নেই।বৌ এখন গোটা দশেক মহিলা সমাবেশে আড্ডা দিতে বেরবেন। তারু ভালোই বোঝে এসব মর্ণিংওয়াকের মানে। তা যাবে যাওনা বাপু।তারু কোনদিন বাধা দিয়েছে নাকি বাধা দিলেই শুনবে!তারু পাশ ফিরে শুতে যাবার উদ্যোগ করতেই মধুর কন্ঠে কল্পনা বলল "এই শুনছো! শিবুর মা একটু পরেই আসবে,এসেই চা না পেলে ওর মাথা গরম হয়ে যাবে।আজ আমার ফিরতে দেরী হবে একটু।তোমাদের মত চা করে নিও। তারু ব্যাজার মুখে বলল  দেরী হবে কেন! শিবুর মায়ের জন্য ও চা করতে হবে নাকি! আমি না হয় গলির মুখে চায়ের দোকান থেকে... তারুর কথা শেষ হবার আগেই কল্পনার মিহি গলা কর্কশ হলো " কেন? একদিন চা করে খেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হবে? আর শিবুর মা কি মানুষ নয় নাকি? মনে রেখ ও যদি  চা না পেয়ে মাথা গরম করে আমিও কুরুক্ষেত্র বাঁধাবো। সারাটা জীবন তোমার সংসারেই তো হেঁসেল ঠেলে গেলাম।এই তো কদিন হলো একটু বাইরের মুখ দ...

পচন- মনোজ কুমার সরকার

  আজ যে কাহিনীর অবতারণা করতে চলেছি পাঠকের কাছে তা নিছক একটি গল্প হলেও আসলে আমার জীবনেই এই বিচিত্র ঘটনাটি ঘটেছিল। অন্তত সেদিন একবিংশ শতাব্দীর যুক্তিবাদী শিক্ষিত মানুষ হওয়া সত্বেও আমি এই ঘটনার জটিল রহস্যের কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। সেই বিচিত্র ঘটনার দর্শকের ভূমিকা নেওয়া ছাড়া সেদিন আমার আর কিছুই করার ছিল না। বছর দশেক আগের কথা। সেবার গ্রীষ্মের ছুটিতে গেলাম মামার বাড়ি বেড়াতে ।মা, বাবা, ভাই ও আমি অর্থাৎ সপরিবারে ।আমার মামাবাড়ী রানাঘাটে কাপাস ক্যাম্পের কাছাকাছি হরিনাথপুরে। হরিনাথপুর একটি ছোট কলোনি বিশেষ ।দেশভাগের পর বহু ছিন্নমূল মানুষ সেখানে পাকাপাকি তাদের বসতি স্থাপন করেছিল। দিদিমা প্রায়ই বলতেন এখানে আগে ছিল শুধুই জল কচুর বন আর আঁশ শেওড়ার ঝোপ। এমনকি আমি নিজেও ওই অঞ্চলে গিয়ে বেশ কিছু পরিত্যক্ত জলা জমি দেখেছি। প্রোমোটারের নেক নজরে পড়লে সেখানে হয়তো ফ্ল্যাটবাড়ি উঠতে পারত। এমনিতে হরিনাথপুর জায়গাটা আমার ভীষণ প্রিয়। আমরা কলকাতার মানুষ। গ্রামবাংলায় আসি একটু টাটকা বাতাসের খোঁজে, আর হরিনাথপুরে সেসব অফুরন্ত। এমন একটি চমৎকার জায়গায় এসে এত ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হবে যদি আগে জানতাম তাহলে সে...

হ্যাপি হানিমুন- অয়নদীপ দেবনাথ

 ছোটো থেকেই ভোর ভোর উঠে পড়া অভ‍্যেস দ্বৈপায়নের। কলেজ লাইফে মেসে থাকাকালীন একটু দেরি হতো উঠতে, তবে তারপর আবার পুরোনো এই অভ‍্যাসটা ফিরে এসেছে ওর।  উজানী এখনও ঘুমোচ্ছে,কাল রাতে জ্বরটা বাড়াবাড়ি রকমের হয়েছিল।দ্বৈপায়নও ঘুমোয়নি রাতে। সারা রাত উজানীর মাথায় জলপট্টি দিয়ে গেছে,আর থার্মোমিটার দিয়ে দেখে গেছে,পারদ নামলো কিনা!চারটে নাগাদ একটু শুয়ে আবার ছটায় উঠে ফ্রেশ হয়ে দুকাপ কফি নিয়ে এল ওদের শোয়ার ঘরে। কফির কাপ দুটো বিছানার পাশের ছোট্ট টেবিলটার ওপর রাখলো,তারপর চোখ গেল উজানীর স্নিগ্ধ মুখটার ওপর।যেন একটা বাচ্চা মেয়ে খুব নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে, নিরাপদ আশ্রয়ে। উজানীর ঘুমটা ভাঙলো দ্বৈপায়নের হাতের স্পর্শে। কপালে আলতো করে হাত দিয়েছে ও। আস্তে আস্তে চোখ খোলে উজানী।স্মিত হেসে তাকালো দ্বৈপায়নের দিকে। দ্বৈপায়নের মুখটা দেখলে যেন জাগতিক সব শান্তি খুঁজে পায় উজানী। উজানী আর দ্বৈপায়নের বিয়ে হয়েছে মাত্র চার মাস। এরমধ্যেই উজানী ওর বাবার ছায়ামুর্তি দেখতে পায় দ্বৈপায়নের মধ্যে।ওর হাতের ছোঁয়ায়,মুখের ছোট্ট হাসিতে যেন এক অনন্য আনন্দ খুঁজে পায়।  চোখ খুলতেই দ্বৈপায়ন জিঞ্জেস করল,"এখন...

আচানকামারের পায়ে পায়ে- সৌরভ সাউ

 ইদানিং নাকি আচানকামারে হাতি দেখা যাচ্ছে; কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, অনেকদিন ধরেই। তবে, এই বর্ষার যাওয়ার উপায় নেই। ঠিক হলো, অমরকন্টক যাওয়া হবে। সেখান থেকে কিছু ফিকির করে জঙ্গলে ঢোকা যেতে পারে আলগোছে। তবে বিলাসপুর থেকে আচানকামারের ভেতর দিয়ে গাড়ী করে যাওয়া হবে না। তাছাড়া রাস্তা খারাপ ও, এমনকি, কোমর খুলে যেতেও পারে! বরঞ্চ বিলাসপুর থেকে পেন্দ্রা রোড পর্যন্ত ট্রেনে গিয়ে, ট্রেন থেকে নেমে পেন্দ্রারোড থেকে অমরকন্টক, গাড়িতে যাওয়া হলে সে অভিজ্ঞতা, রোমাঞ্চকর হবে ঢের বেশি। বিলাসপুর থেকে পেন্দ্রা রোড পর্যন্ত রেলপথ কী অপরূপ সুন্দর,, ট্রেনের মধ্যে থেকে! অনেকের মুখেই শুনেছি, কিন্তু, কখনো যাওয়ার সুযোগ হয়নি।  সায়ন বললো, "এই বর্ষায় এই পথে ঘুরে এলে কেমন হয়...?"  কথাটা সকলের ই মনে ধরলো। সারাদিন কত কি কল্পনার জাল বোনা ক্ষান্ত দিয়ে অনন্ত দের বাড়ি সন্ধ্যেবেলা আড্ডা জমালাম। বাইরে অকাতরে ঝড়ছে বর্ষার বৃষ্টি। ফোন, ল্যাপটপে জোড়ায় জোড়ায় চোখ নিবদ্ধ। দেখা হচ্ছে অনলাইনে কোন ট্রেনে টিকিট পাওয়া যায়। অনিমেষ বলল, "সবচেয়ে ভালো হয় যদি বোম্বে মেলে যাই...। সকাল সকাল বিলাসপুর নামিয়ে দেবে।...

এইভাবেও থাকা যায়- কাঁকন মুখার্জী

  #শুরুতেইশেষনয় ❌ বরং  #শেষটাওশুরুরমতোই_থাক ❤️❤️ ( সম্পর্কে আসার আগে ও পরে )  আমরা যখন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হই ... যখন কাউকে ভালো লাগতে শুরু করে তখন যেন মনে হয় আশে পাশে থাকা সব কিছুই মিথ্যে ...  চারিদিকে শুধু  সেই ভালোলাগার মানুষটা ছাড়া আর কিছুই নেই !!!  সয়নে স্বপনে শুধুই ওই মানুষটা ...😊❤️   একটু একটু করে তার সাথে জড়িয়ে পড়া , যেই মানুষটা ছিলো ভালোলাগার মানুষ সেই কিছু দিন পর ভালোবাসার মানুষ হয়ে ওঠে। এত টাই জড়িয়ে পড়ি আমরা প্রত্যেকেই আগামী সাত জন্ম তার সাথে সংসার করার স্বপন , ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সবই করে ফেলি ।  সব ঠিক করে ফেলি ... আমাদের প্রথম মধুচন্দ্রিমা কোথায় হবে পাহাড় নাকি সমুদ্র, বাচ্চা কটা নেবো , তাদের নাম কি রাখব , ছেলে হলে ভালো হবে নাকি মেয়ে হলে !!  বিয়ের পর অফিস থেকে ফিরে বিকেলে কোথায় যাবো সব ঠিক করা থাকে ........ এমনও কথা হয় ... " আচ্ছা ,বাচ্চা হয়ে যাওয়ার পর আমাদের ভালোবাসাটা যেন আগের মত থাকে 🤭 " ওদের বাড়িতে রেখে আমরা প্রেম করতে যাবো গঙ্গার ধারে .... ঠিক আছে  তো !!!  আগামী সাত জন্ম আমরা কি কি করবো স...

স্পর্শ- শ্রীদত্তা সেন

  আর তারপর? -তার আর কোনো পর নেই। ওখানেই শেষ।  ভীষণরকম লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পরে যখন আজকাল একটু জিরোতে যায় তখনই মৃদুলার নানান মানসিক যন্ত্রণা, চিন্তা ছেঁকে ধরে। যথোপযুক্ত আরাম আর নেওয়া হয়না। প্যাচপ্যাচে গরমে ঘেমে নেয়ে এসে গা ধুয়ে বসার সময়েই তার মনের মাঝে একটাই কথা ঘুরে ফিরে আসে। "বয়স হচ্ছে। কিছু করতে হবে। কিছু করতেই হবে। আর কতদিন বুড়ো বাপের ওপর বোঝা হয়ে থাকবো?" আসলে কথাটা ওর নয়। ওর মনের মাঝে কেউ বা কারা রোপন করেছে।  শুরুটা এমন কিন্তু ছিলো না। বেশ মধুর ছিলো। সবকিছুই ঘেঁটে দিলো বর্তমান পরিস্থিতি। অভূতপূর্ব এক ক্ষতির পরে মন, শরীর সব গোছাতে ব্যস্ত থাকায় আজকাল আর শিশির মাখা চিকন ঘাস, কুয়াশাকে দেখতে পায়না। বা বলা চলে দেখতে চায়না। কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এসব আর মানায়না।  এসবই হাবিজাবি লেখা ছিলো ওর ডায়েরিতে। কিন্তু দুঃখের সাথে বলার সেই ডায়েরিটাও আজ নেই। পাতা আছে। কিন্তু সব খালি। আজকাল নাকি ওর শূন্যতার মধ্যের লেখা, কথাকে বেশি আঁকড়ে ধরছে।  আসলে এইটা একটা ব্যাধি। আর তার শিকারও হয় অনেকেই। নিজেকে একদম ছোট্ট চিলেকোঠার ঘরে বন্দী রেখেছে। ভেঙে যাওয়ার পরে উঠতে গেলে নিজের সবকিছ...

বিতানের মা- চিত্রলেখা চক্রবর্তী

  শুনুন আমার ছেলে বিতান ।  প্রফেসারী  করে দিল্লীর আই আই টি তে । ওর চাকরী করার শখ কোনোদিনই ছিল না । সব সময় আমাদের কে বলতো গবেষণা করবে ।  তাই  প্রফেসারী করে আর নিজের গবেষণার দেখভাল নিজেই করে । মা হিসেবে  ওর খাওয়া দাওয়া যত্নাত্তির  টুকুতে ‌কোনো ত্রুটি রাখিনি ।  ।  সবসময় ওর সাথে বন্ধুর মতো মিশেছি । ওকে বোঝার চেষ্টা করেছি ।  এটা আমার কর্তব্য বন্ধুর মতো বাচ্চাদের সঙ্গে মেশা ।তাই আমাদের মা বেটার সম্পর্কটা বেশ জমকালো । হুম পড়াশোনাটা ওর বাবা দেখে । আমি পড়াশোনাতে ভালো ছিলাম না । যদিও ভূগোলে স্কুলে সর্বোচ্চ নাম্বার টা আমি পেতাম । ওই আঁকতাম প্রচুর । ক্লাস এগারো   বাবা দেখলো ছেলে । সুপাত্তর পেয়ে গেল । ঘটা করে দিল বিয়ে । বিয়ের পর স্কুল ছেড়ে দিলাম ।যদিও আমার উনি বলেছেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে।  ভালোবাসা , ভালো থাকার একটুও কমতি নেই ।   হল একবছরের মধ্যে বিতান । এই টি আমার একটাই মানিক্য । সব শুধু এই আমার পুত্তুর কে ঘিরে । সু পুত্তুর ও তত্তর করে বেড়ে উঠলো । আমার ও বয়স বাড়তে লাগলো । তবে স্কুল ছেড়েছি সে তো হলো । কিন্তু ওই...

কালাহান্ডির মানুষখেকো- সৌরভ সাউ

  পুব দিক থেকে পরতে পরতে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছিল। কিছুক্ষণ আগে থেকে বৃষ্টি টাও শুরু হয়ে গেল। প্রথমে ফিস ফিস করে তার পর ঝিরঝির করে। আমি যে জিরহুল গাছটায় বসে আছি সোজা আর ঝাঁকড়া বলে এখনো গায়ে বৃষ্টির ছাঁট লাগছে না। সামনে ব্যাসল্ট পাথরের স্তুপটা বৃষ্টির জলে ভিজে চকচকে হয়ে উঠেছে। এমনিতেই কালো হয় এই ব্যাসল্ট পাথর। তার ওপর আবার জল পড়ে কালো রঙ আরো ফুটে উঠেছে। চারিদিক থেকে শিলাজতুর গন্ধ উড়ছে। পাথরের স্তুপটা ফুট ত্রিশেক উঁচু হয়ে আবার সমান হয়ে গেছে উওরের দিকে। ওদিকটায় ঘন জঙ্গল। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হতে বেশি দেরি নেই। উওরের ঐ জঙ্গলের দিক থেকে চোখের পলক পরতে না পরতেই গোটা দশেক অতিকায় হাতি নেমে এলো পাথরের ঢাল বেয়ে। জল পড়ে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় একটা বাচ্ছা হাতি হাত পাঁচেক ওপর থেকে হরকে পড়ল পাথর গুলোর পায়ের কাছে। ওদিকে দেখতে গিয়েই একটা মাদি হাতির চোখ পড়ে গেল ফুট চল্লিশেক ওপরে গাছের ওপর বসা আমার দিকে। ব্যাস আর যাই কোথায় ! ওত ব...