সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হলুদ ট্যাক্সি- দেবজিৎ গোস্বামী



 বিকেল বেলার সময়ে একটা হলুদ ট্যাক্সি দাঁড়ালো ওই পুরোনো মল্লিক বাড়ির সামনে। বেশ হতবাক হলাম কারন আমি জানতাম ও বাড়ির বাবুরা পূজোর সময় ছাড়া আসেন না। তার আগে তাদের হঠাৎ এভাবে অকাল বোধন এ বেশ হতবাক হয়ে,দৃশ্যটা নিজের বাড়ির ছাদ থেকে দেখছিলুম।


দেখেছেন নিজের পরিচয়ই দেওয়া হয়নি আমার নাম অপেন্দ্র দত্ত ওরফে অপু। 

আমি এখন বি.এ থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। এই এতোদিনেও কোনো সঙ্গী জোটেনি আমার। 


ট্যাক্সি থেকে নেমে এলো হালকা গোলাপি চুড়িদার পড়া একটি বছর উনিশের মেয়ে, পাড়ার লোকের চোখ তার দিকেই,সে আট চোখে চারপাশ দেখে ভেতরে ঢুকে গেল।


রাতের বেলা খাওয়ার সময় মা বললো বাবা কে উদ্দেশ্যে করে, 

মা~জানো? আজ তোমার বন্ধু অজিত এর মেয়ে অনুপমা এসেছে।

বা~ কোন অজিত? মল্লিক বাড়ির? 

মা~ হ্যাঁ গো। 

বা~ তা পূজোর তো এখনও একমাস এতো তাড়াতাড়ি এলো কেন? 

মা~ শুনলাম কীসব কাজ করবে বলে এসেছে। 

বা~ ও আচ্ছা

সেই দিনকার রাতটা অন্যভাবেই কেটে গেল। 


একদিন আমার আর ওর হঠাৎ চোখাচোখি হয়ে গেল ছাদে। 

সে বেশ লাজুক ভাবেই মুখ ঘুড়িয়ে নিলো। সেই লাজুক ভাবেই আমি তার ওপর আকৃষ্ট হলাম। এভাবে আমাদের প্রথম আলাপ ফেসবুক থেকে হোয়াটসঅ্যাপ,গল্পের গরু এবার গাছে ওঠেছে। 

এভাবে চলতে চলতেই এমন প্রেমে যা হয় তাই হলো আমাদের সাথেও, 

পূজো চলে এলো, অনুপমার বাড়ির সবাই এলো। 

জানাজানি হয়ে গেল সবটা। 


তারপর দশবছর অনুপমা আর পূজোয় আসেনি। আজ আমি একজন সরকারি চাকরিজীবী। কিছুদিন যাওয়ার পর সবই ভুলে গেছিলাম আমি এখন এক মেয়ের বাবা। 

এগারো বছরের মাথায় সব আবার মনে পড়লো, আবার মল্লিক বাড়ির সামনে একটা হলুদ ট্যাক্সি দাড়ালো। একটা ফুটফুটে বাচ্চা ছেলে আমার মেয়ের বয়সী নেমে এলো বুঝতে অসুবিধা হয়নি। এটাই আমার অনুপমার একমাত্র অনুপম, অপেন্দ্র বা অপু না। 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ঝড়ের আড়ালে- দোলা সাহা

  অসহায় স্তব্ধতায় বুক দুরু দুরু; ক্ষনিক আশা যাহা ছিল মনে, ভাঙিল তা প্রবল করাঘাতে। বেদনার গ্লানি, আর শোকাতুর মন বাধিল ক্ষনিক আশা একটু স্নেহের পরশ জরাহীন ভারতবর্ষ মুক্ত করো সবে হারিয়ে যেতে দেবনা আমরা গভীর অন্ধকারে শত শত ক্ষত ভরিয়ে তুলব- গভীর মমতায় ভরা স্নেহের প্রলেপে।

অন্য পুজো - পিনাক

  ১ অনেকদিন ধরেই ছেলেটা বায়না ধরেছে এবার পূজোয় একটা নতুন জিন্সের প্যান্টের জন্য। বছরদুয়েক আগে ওর বাবা অন্ধ্রে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়েছিলো, তারপর থেকে আর ফেরেনি। এখনো পর্যন্ত তার কোনো খোঁজখবরও পাইনি সে।পাঁচবাড়ি দুইবেলা কাজ করে কোনোমতে সংসারটা টেনেটুনে চলে যায় আর মিডডে মিলের দয়ায় ছেলের একবেলা পেটটা কোনোরকমে ভরে যায় রোজ। অনেক ইতস্তত করে আজ বড়বাড়ির বৌ এর কাছে পাঁচশ টাকা চেয়েই বসেছিল ফুলমনি ছেলের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। অনেকদিনের বিশ্বস্ত লোক, দু'বছরে একদিনও কামাই করেনি:বড়বাড়ির বৌ তাই টাকার কথাতে একবারের বেশী দুবার ভাবেনি।  আজ বিকেলে মনটা বেশ খুশি ছিল ফুলমনির। টুসিদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ি না ফিরে সোজা চলে গিয়েছিল বড়রাস্তার ধারে কাঁচের দরজা দেওয়া জামাকাপড়ের দোকানটার দিকে। রাস্তায় গাড়ি বেশী ছিলো না তখন; দোনোমোনো করে রাস্তাটা পেরোতে গিয়েছিল সে। বকুলতলার দিক থেকে বিকট শব্দ করে হঠাৎ একটা গাড়ি চলে আসে দানবের মতো! তারপর... মায়ের ডাকে ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে যায় পল্লবের! ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে সে বিছানায়... ২ ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে শ্যমলকে বাইক চালিয়ে রোজই ফিরতে হয় অফিস থেকে। আজ অফিস থেকে বেড়িয়ে অফিসের ...

পচন- মনোজ কুমার সরকার

  আজ যে কাহিনীর অবতারণা করতে চলেছি পাঠকের কাছে তা নিছক একটি গল্প হলেও আসলে আমার জীবনেই এই বিচিত্র ঘটনাটি ঘটেছিল। অন্তত সেদিন একবিংশ শতাব্দীর যুক্তিবাদী শিক্ষিত মানুষ হওয়া সত্বেও আমি এই ঘটনার জটিল রহস্যের কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। সেই বিচিত্র ঘটনার দর্শকের ভূমিকা নেওয়া ছাড়া সেদিন আমার আর কিছুই করার ছিল না। বছর দশেক আগের কথা। সেবার গ্রীষ্মের ছুটিতে গেলাম মামার বাড়ি বেড়াতে ।মা, বাবা, ভাই ও আমি অর্থাৎ সপরিবারে ।আমার মামাবাড়ী রানাঘাটে কাপাস ক্যাম্পের কাছাকাছি হরিনাথপুরে। হরিনাথপুর একটি ছোট কলোনি বিশেষ ।দেশভাগের পর বহু ছিন্নমূল মানুষ সেখানে পাকাপাকি তাদের বসতি স্থাপন করেছিল। দিদিমা প্রায়ই বলতেন এখানে আগে ছিল শুধুই জল কচুর বন আর আঁশ শেওড়ার ঝোপ। এমনকি আমি নিজেও ওই অঞ্চলে গিয়ে বেশ কিছু পরিত্যক্ত জলা জমি দেখেছি। প্রোমোটারের নেক নজরে পড়লে সেখানে হয়তো ফ্ল্যাটবাড়ি উঠতে পারত। এমনিতে হরিনাথপুর জায়গাটা আমার ভীষণ প্রিয়। আমরা কলকাতার মানুষ। গ্রামবাংলায় আসি একটু টাটকা বাতাসের খোঁজে, আর হরিনাথপুরে সেসব অফুরন্ত। এমন একটি চমৎকার জায়গায় এসে এত ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হবে যদি আগে জানতাম তাহলে সে...