১
অনেকদিন ধরেই ছেলেটা বায়না ধরেছে এবার পূজোয় একটা নতুন জিন্সের প্যান্টের জন্য। বছরদুয়েক আগে ওর বাবা অন্ধ্রে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়েছিলো, তারপর থেকে আর ফেরেনি। এখনো পর্যন্ত তার কোনো খোঁজখবরও পাইনি সে।পাঁচবাড়ি দুইবেলা কাজ করে কোনোমতে সংসারটা টেনেটুনে চলে যায় আর মিডডে মিলের দয়ায় ছেলের একবেলা পেটটা কোনোরকমে ভরে যায় রোজ। অনেক ইতস্তত করে আজ বড়বাড়ির বৌ এর কাছে পাঁচশ টাকা চেয়েই বসেছিল ফুলমনি ছেলের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। অনেকদিনের বিশ্বস্ত লোক, দু'বছরে একদিনও কামাই করেনি:বড়বাড়ির বৌ তাই টাকার কথাতে একবারের বেশী দুবার ভাবেনি।
আজ বিকেলে মনটা বেশ খুশি ছিল ফুলমনির। টুসিদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ি না ফিরে সোজা চলে গিয়েছিল বড়রাস্তার ধারে কাঁচের দরজা দেওয়া জামাকাপড়ের দোকানটার দিকে। রাস্তায় গাড়ি বেশী ছিলো না তখন; দোনোমোনো করে রাস্তাটা পেরোতে গিয়েছিল সে। বকুলতলার দিক থেকে বিকট শব্দ করে হঠাৎ একটা গাড়ি চলে আসে দানবের মতো! তারপর...
মায়ের ডাকে ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে যায় পল্লবের! ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে সে বিছানায়...
২
৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে শ্যমলকে বাইক চালিয়ে রোজই ফিরতে হয় অফিস থেকে। আজ অফিস থেকে বেড়িয়ে অফিসের সামনের বড় শাড়ির দোকানটা থেকে মিতালীর জন্য একটা তাঁত জামদানি কিনে ফেলেছিল আবেগের বশে, তার অভিমানী বউকে একটু সারপ্রাইজ দেওয়ার আশায়। একঘেয়ে জীবনে রোজই এরকম একটু মুক্ত বাতাসের খোঁজ করতে হাঁফিয়ে ওঠে সে; এ জীবন তার মতো ছোট থেকে দুবেলা দুমুঠো না খেতে পেয়ে বড় হয়ে ওঠা ছেলের চলার পথে কখনো গোলাপ বিছিয়ে দেয়নি; তার জীবন চলে প্রতিদিনই অজস্র দায়িত্ব, যন্ত্রনা আর মৃত্যূর সঙ্গে আপোস করতে করতে। আসা যাওয়ার পথে মৃত্যূ কখনো তাকে সতর্ক করে দিয়ে পাশ কাটিয়ে তীব্র বেগে ছুটে চলে যায় আবার হয়তো কখনো সেই মৃত্যূর সাথেই তার দেখা হয়ে যায় সামনের রাস্তার কোনো বাঁকে। বকুলতলা টা পেরিয়ে রাস্তার মোড়ে জটলা দেখে বাইক এর গতি কমিয়ে দেয় শ্যামল...
কিছু স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় না আর কিছু চরিত্র ও ঘটনা সবসময় কাল্পনিক হয় না!

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন