সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফিরে দেখা- অয়নদীপ দেবনাথ



 

ইসস্, ঘুম থেকে উঠতে আজও খুব দেরি হয়ে গেছে।

কিছুদিন ধরে এই এক রোগে পেয়েছে উজানীকে, রাতে কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না, আজেবাজে চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায় শুধু আর প্রতিদিন উঠতে দেরি হয়ে যায়।

প্রতিদিন ভাবে ডাক্তারের কাছে যাবে,হয়েই উঠছে না।

এসব ভাবতে ভাবতেই মা আর বাবার জন্য চা করে দিয়ে নিজে স্নানের ঘরে ঢুকলো।আয়নার দিকে চোখ যেতেই মনে মনে হেসে উঠলো, সত্যি একদিন কতো সাজগোজ,হাসি ঠাট্টা, একডাকে সুন্দরী হিসেবে পরিচিত,প্রেমপত্র, প্রোপোজাল,কত কি!!

আর আজ সেই সাজগোজের ধারের কাছেও যেতে ইচ্ছা করে না ওর। নিজের মনেই ভাবতে থাকে কেন এমন হয়ে গেছে !বয়স তো মাত্র পঁচিশ, তবে কেন সাজগোজ ছেড়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে !

এর মধ্যেই ভেসে ওঠে সেই পুরোনো মুখটা, কাপুরুষ একটা, পালিয়ে গেছে সব ছেড়ে, নিজের ভালোবাসার কথা নিজের মুখে যে বলতে পারে না,সে কাপুরুষ ছাড়া আর কিই বা হতে পারে।এই সব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কেঁদে ফেলে উজানী, কেন কাঁদছে , কেন কষ্ট হচ্ছে আজ ওর ওই অপদার্থ, কাপুরুষ টার কথা ভেবে।এসব কথা ভাবতে ভাবতেই চোখের জল মুছে,রেডি হয়ে, টুকিটাকি খেয়ে স্কুলের দিকে রওনা দেয় উজানী।

 

উত্তরবঙ্গের শীতটা বেশ মজাদার, অন্তত দ্বৈপায়নের তাই মনে হয়,শীতকালে এমন ঠান্ডা পড়বে যেন হাড় জমে যায়, নাহলে সেই শীতকাল শীতকালই নয়। অফিস থেকে ঢোকার সাথে সাথেই ছোট্টু একটা কার্ড হাতে এগিয়ে এসে বললো,"বাবুসাব কিসি মেমসাব কি খাত হে",বলেই মিচকি মিচকি হাসতে থাকলো। তবে দ্বৈপায়ন চোখ বড়ো করতেই একছুটে রান্নাঘরে ঢুকে গেল ও।

কার্ড টা হাতে নিয়েই একটু থমকে গেল,অন্তরার বিয়ের কার্ড।

সাথে একটা চিঠি, "যদি দ্বৈপায়ন দার এতটুকু ভালোবাসা বেঁচে থাকে তার অন্তরার প্রতি, তাহলে হয়তো আসবে তুমি।"

চিঠি আর কার্ডটা হাতে নিয়ে  দাঁড়ালো ওর ব‍্যালকনিটাতে গিয়ে।

সিগারেট ধরিয়ে পাড়ি দিল পাঁচ বছর পুরোনো দিনগুলোতে। আর সে যে চিন্তা টা আর কোনোদিন মাথায় আনবে না বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল,সেই চিন্তাটাই ঘুরতে থাকে ওর মাথায়, কেমন আছে আজ উজানী, নিশ্চয় আজ স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করছে। এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোণটা ভিজে এলো দ্বৈপায়নের।

 

কলেজে পড়াকালীন উজানী ছিল অন‍্য জগতে, পড়াশোনা, গল্পের বই, গান, আড্ডা এগুলো নিয়েই মেতে থাকতো সর্বদা। দেখতে খুব সুন্দর ছিল, প্রচুর ছেলেরা সবসময় ঘুরেও বেরাতো চারপাশে, তবে কোনোদিনই কোনো ছেলেকে প্রশ্রয় দেয়নি,এটা ছিল ওর এক মস্ত গুন।সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল অভিমন্যু, ওকেই হয়তো উজানী ভালোবাসতো কিছুটা। তবে সময় বলেছিল ওরা শুধুমাত্র বন্ধু,এর থেকে বেশি কিছু নয়, হওয়া সম্ভব টাও নয়, চিন্তা ভাবনা তাদের ভিন্ন মেরুর।

 দ্বৈপায়ন কোনো দিনও মুখে কিচ্ছুটি বলতে পারেনি উজানীকে, কারণ প্রথম থেকেই ভেবেছিল উজানীর জন্য অভিমন্যু সঠিক, রূপে,গুনে,অর্থে। নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিল সে।

আর এটাই ছিল উজানীর একমাত্র রাগ, উজানী দ্বৈপায়নের ভালোবাসা বুঝলেও নিজে থেকে এগোয়নি কখনো। কারণ ওর ইচ্ছা ছিল সকলের সামনে খুলে বলুক দ্বৈপায়ন ওর ভালোবাসার কথা, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি কোনোদিনো।

এই দুজনের দড়ি টানাটানির লড়াইয়ে কষ্ট পেতে থাকে এক সুন্দর ভালোবাসা। এভাবেই এখন সে দূরত্ব আলিপুরদুয়ার আর শান্তিপুরের মধ্যে বিস্তার পেয়েছে।

উজানী আজও বিয়ে করেনি ওর বাবা মায়ের দেখাশোনার জন্য, সকলে তাই জানে। এখন এক প্রাইমারি স্কুলে আছে ও। তবে বিয়ে না করার কারণ টা হয়তো সকলের অজানাই রাখতে চায় ও।

দ্বৈপায়নও পুরোনো সব স্মৃতি ভুলে যাওয়ার জন্য চলে গেছে উত্তরবঙ্গ। বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন সব ছেড়ে, উজানীকে ছেড়ে, পাঁচ বছর।

 

উজানী জানে সামনেই ওর প্রিয় বন্ধু অন্তরার বিয়ে, মনটা ছটপট করলেও অন্তরাকে জিঞ্জাসা করতে পারেনি কিছু, জিঞ্জাসা করতে পারেনি যে দ্বৈপায়নকে বলেছে কিনা আসার জন্য, কিন্তু মনে মনে দেখতে চেয়েছে ওকে একটি বার,বার বার ভেবেছে কি এখন প্রেম করছে, আবার কখনো তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিমায় রাগে অভিমানে নিজেই নিজেকে বলেছে,ওই কাপুরুষ কোনো দিনও কোনো মেয়ের উপযুক্ত নয়,যে ভালোবাসার কথা বলতে ভয় পায়,সে প্রেম করবে হতেই পারে না। আবার পরক্ষনেই চোখের কোণ টা ভিজে ওঠে জলে। নিজের মধ্যে দ্বন্দ্বে ছিঁড়ে যেতে থাকে ভেতরটা। তবে কেন ওই কাপুরুষটার জন্য এতো কষ্ট পাচ্ছে , কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেনা।

 

দ্বৈপায়ন ঠিক করে সব ভুলে আবার যাবে শান্তিপুরে, অন্তরাকে কষ্ট দিতে পারবে না। ওকে যেতেই হবে। কারণ এক সময় সবথেকে কাছে থেকে, পাশে থেকে অন্তরা যেকোনো সময় যেকোনো বিষয়ে লড়ে গেছে দ্বৈপায়নের হয়ে,আর কারো কিছুতে না হোক অন্তরার বিয়েতে যাবেই ও। ছুটির আবেদন পত্র জমা দেয় ব‍্যাঙ্কে।তখনও মনে মনে চিন্তা ঘুরতে থাকে, হয়তো দেখা হতেও পারে উজানীর সাথে।

 

১১ এই ডিসেম্বর বিয়ে, অন্তরার বাড়িতে হইচই হুটোপাটা, সকলে ব‍্যস্ত।

ওকে পরিবেষ্টিত হয়ে বসে আছে ওর বান্ধবী,সম বয়সী আত্মীয়রা।

বর মনে হয় এখনো আসেনি, কিন্তু সে কি এসেছে,এসব ভাবতে ভাবতেই দ্বৈপায়ন অন্তরার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

অন্তরার বিয়েতে আনন্দ বেশি, নাকি দ্বৈপায়নকে দেখে, সেটাই অনেকে বুঝে উঠতে পারেনা, হাসতে হাসতে ওই মূহুর্তেই কেঁদে ফেলে অন্তরা,ওর অনেক বন্ধুরাও চিনতো দ্বৈপায়নকে।

ওদের মধ্যে অনেকেই খুব ভালোবাসতো ওকে, তাদের চোখেও হালকা আনন্দের জল চোখ এড়ালো না দ্বৈপায়নের। এমন সময় ঐন্দ্রিলা হঠাৎ দ্বৈপায়নের হাত টেনে ধরে বসালো, তারপরেই বললো কেমন আছো দাদা?

উত্তরের অপেক্ষা না করেই বললো উজানী আসছে,ওর মা এর শরীর খারাপ তো তাই আসতে একটু দেরি হচ্ছে।

দ্বৈপায়নের পা এর তলা থেকে একটু যেন মাটিটা সরে গেল,এসব কেন বলছে ঐন্দ্রিলা!! কেন টানছে পুরোনো কথা!! কি বুঝেছিল কিছু!!

তারপরই নিজেকে সংযত করে বোঝায় যে, হয়তো এমনি বলেছে,সবার মাঝে উজানী নেই,তাই হয়তো কথা প্রসঙ্গে উজানীর কথাটা বলেছে। এরপরই দ্বৈপায়ন উঠে যায় ওখান থেকে কিছুটা দূরে। 

অন্তরার মায়ের সাথে কথা বলতে বলতেই গেটের দিকে চোখ যায় ওর, দেখতে পায় এক অচেনা সাজে প্রিয় মুখটা, আবার তালগোল পাকিয়ে যায় নিজের মধ্যেটা।

কিন্তু এতটা অগোছালো লাগছে কেন উজানীকে!!শরীর ভালো আছে তো ওর!!

নিজের মনেই চিন্তার ঝড় ওঠে দ্বৈপায়নের। উজানীও দেখে দ্বৈপায়নকে অন্তরার মায়ের সাথে কথা বলতে, একটু থমকে যায় ওর ভেতরটা, তবে নিজেকে সংযত করে চলে যায় অন্তরা যেখানে বসেছে, সেখানেই। যেতে না যেতেই, ঐন্দ্রিলা আনন্দে ছটপট করতে করতে উজানীকে বলে,"এই উজানী দ্বৈপায়ন দা এসেছে জানিস, দাঁড়া ওকে ধরে নিয়ে আসি কোথায় যে গেল।"এই বলেই উজানীর উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে গেল দ্বৈপায়নকে খুঁজতে। উজানীর মনের ভেতরটা যাই বলুক, নিজেকে কারো সামনে ধরা দেবে না এই ওর মনোভাব।

একগাল হেসে বসলো অন্তরার পাশে।

অন্তরা কিছুক্ষণ একভাবে তাকিয়ে থাকে উজানীর দিকে। কারণ জানতো দ্বৈপায়ন কতোটা ভালবাসে উজানীকে।আর আজ আবার দ্বৈপায়ন আর উজানী এক জায়গায়, মুখে শুধু বললো কিরে আজ কি একটু সেজে আসতে পারতিস না!!

উজানী ঠোঁটের কোণে হালকা হাসিটা ধরে রেখে একটু বেঁকা সুরে বলল, কেন রে আজ কি কোনো স্পেশাল মানুষ আসবে নাকি যার জন্য সেজে আসতে হবে আমায়!!

তারপরই কথাটা ঘোরানোর জন্য বললো, জানিসতো অন্তরা, এখন আর ভালো লাগে না ওসব সাজগোজ করতে।

অন্তরা আর নিয়ে কোনো কথা বললো না। এসময় ঐন্দ্রিলা দ্বৈপায়নকে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এল অন্তরাদের বসার ওখানে।

এসেই বললো দেখ উজানী কাকে নিয়ে এসেছি,তা আজ একবার আবার দেখবো নাকি ইষ্ট বেঙ্গল আর মোহনবাগানের ঝগড়া।

সকলেই হেসে উঠলো,আর দুটো মনে ঠিক সেই সময়ই যেন প্রবল বেগে ঝড় উঠলো আবার।

উজানী ব‍্যঙ্গের সাথে বললো, যেমন দল তেমনই তাদের সাপোর্টার, আগের ডার্বিতেও ইষ্ট বেঙ্গল কে হারালাম, এসব ভিতু,হেরে যাওয়া,পালিয়ে যাওয়া সাপোর্টারদের সাথে ঝগড়া করার মতো সময় বা ইচ্ছে কোনোটাই আমার নেই।

পাঁচ বছর আগে হলে দ্বৈপায়ন হয়তো ঝগড়া জুড়তো, কিন্তু আজ এই নিয়ে কোনো কথাই বললো না। শুধু হেসে বললো কেমন আছো উজানী?

সকলে চুপচাপ, উজানী নিজের রনমূর্তি ছেড়ে একটু হেসে কিন্তু গলাটা যথেষ্ট সংযমী করে বললো ভালো, আর আপনি?

আপনি বলাতে দূরত্ব বোঝাতে চাইলেও,সেটা কারো চোখ এড়ালো না, ঐন্দ্রিলা সঙ্গে সঙ্গে বললো কিরে দ্বৈপায়ন দা আপনি কবে হলো?

উজানী গম্ভীর হয়ে বললো যেসব মানুষ গুলো নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে দূরত্ব তৈরি করতে চায়,যারা দূরেই থাকতে চায়, তাদের "তুমি" বললে তাদের তপস্যাতে হয়তো বিঘ্ন ঘটতে পারে,তাই আপনি টাই ঠিক আছে।

দ্বৈপায়ন বুঝে উঠতে পারছিল না যে উজানী কেন এরকম করছে, তবুও বললো, ভালো আছি।

রাতের শেষ লগ্নে বিয়ে,তাই সকলে এগারোটা নাগাদ খেতে বসলো, ঐন্দ্রিলা জোর করে ওদের সাথে খেতে বসালো দ্বৈপায়নকে।

খাওয়ার সময় টুকিটাকি গল্প হলো,এরপর খাওয়া শেষে আইসক্রিমটা নিয়ে উজানী দ্বৈপায়নের দিকে এগিয়ে গেল, তারপরই বললো,"এই যে শুনছেন, নিজেরটা শেষ করে আমার আইসক্রিমটা খাবেন, নিশ্চয়ই এখনও খুব ভালোবাসো, আমার ঠান্ডা লেগেছে, আমি খাব না।"

দ্বৈপায়ন বলতে যাচ্ছিল এতো এখন আর খাই না, কিন্তু উজানী বলে উঠলো মুখটা ওরকম করার কিছু নেই, যেটা বলছি সেটা শুনবে। সেই আগের মতোই ধমক, আবার গলা শুকিয়ে আসছে দ্বৈপায়নের।এই ওর এক রোগ, সব মানুষের সাথে এতো গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলতে পারলেও উজানীর সামনে এলে  আজও কথা জড়িয়ে যায়,গলা শুকিয়ে আসে।

এরকম গলা শুকনো অবস্থায় দুটো কেন দশটা আইসক্রিমও খেয়ে নেওয়া যায়!!

এরপর দুজনে পাশাপাশি বসে কিছুক্ষণ গল্প করলো ওরা, টুকিটাকি এর ওর সম্পর্কে জানা, কেমন আছে, কি করছে এগুলোই।

এরপরই বিয়ে শুরু হলে সকলে ওখানে উপস্থিত হয়।

সেই সময়ও উজানীর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল দ্বৈপায়ন, বিয়ে দেখতে দেখতে দ্বৈপায়ন উজানীকে জিঙ্গাসা করল, বিয়ে করোনি কেন এখনো??

উজানী আবার রেগে যায় হঠাৎ করে, সোজাসুজি তাকিয়ে বলে, এসব তুমি জেনে কি করবে?করবো না আমি বিয়ে,কি এসে যায় তাতে তোমার?

দ্বৈপায়ন আবার শান্তভাবে বলে কেন কাকু কাকিমা অসুস্থ বলে, ওদের চিন্তাতে করছো না বিয়ে?

আরও রেগে যায় উজানী,সে এবার চেঁচিয়ে বলে, জানি না, জানি না, জানি না.. আমি কিচ্ছু জানি না, আর করবে না এই প্রশ্ন,বলেই ওখান থেকে সরে চলে যায় ঐন্দ্রিলার কাছে। তবুও চোখটা পড়ে থাকে তার দ্বৈপায়নের দিকেই।

উজানীর চোখের ভাষা আজ আর বুঝতে অসুবিধা হয়নি দ্বৈপায়নের।

তবুও গলাটা এখনও শুকিয়ে যাচ্ছে ওর।

বিয়ের পর সকলে বাসর রাতে একসাথে আড্ডায় বসেছে।

এখন দ্বৈপায়ন নিজে থেকেই বসলো উজানীর পাশে।

শুরু হলো আড্ডা, গানের লড়াই এসব।এর ফাঁকেই বুকের মধ্যে অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে উজানীর গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে দ্বৈপায়ন বললো, উজানী একটা কথা বলার ছিল।

এবার উজানীর চোখটা যেন অনেক শান্ত, সোজা দ্বৈপায়নের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,বলো,কি বলবে।

দ্বৈপায়ন চোখ বুজে, একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে, টানা বলে গেল ,"আমি তোমাকে বহুদিন ধরে ভালোবাসি, বলতে পারিনি, কেন বলতে পারিনি জানতে চেওনা, আমার বদলি আলিপুরদুয়ার থেকে কৃষ্ণনগর ব্রাঞ্চে হচ্ছে, তুমি এখানেই থাকতে পারবে, কাকু কাকিমার সব রকম যত্ন নিতে পারবে। তুমি কি আমায় বিয়ে করবে উজানী!"....

কথাটা বলেও ওর হাত পা কাঁপছে,চোখ খুলতে পারছে না। উজানী আস্তে করে বললো, চোখ খোলো।

উজানীর খুব হাসি পাচ্ছিল, তবুও দ্বৈপায়ন চোখ খুলতেই মুখটা গম্ভীর করে বললো, না আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না, এরকম ইষ্ট বেঙ্গল ভিতু মার্কা ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না,বলেই একটু মুখ বেঁকালো ও।

এরপরই দ্বৈপায়ন শুধু বললো আচ্ছা তবে তাই হোক, বিয়ে করতে হবে না আমায়,বলেই উঠে গেল বাসরঘর থেকে।

উজানীর চক্ষু চড়কগাছ, আরে ছেলেটা যাচ্ছে কোথায়!!

দ্বৈপায়ন ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সবার আগে উজানী চিৎকার করলো, আরে,তুমি যাচ্ছোটা কোথায়?

অন্তরা, ঐন্দ্রিলা একসাথে বললো কি হলো রে উজানী, দ্বৈপায়ন দার?

উজানী উঠে দাঁড়িয়ে অন্তরার দিকে তাকিয়ে বললো আরে এই ছেলেটা কি রে!!.. কিচ্ছু বোঝে না মনের কথা!!..যেই বললাম ওকে বিয়ে করব না, ওমনি চলে গেল,আরে মুখের কথাই শুধু দেখলি, মনটা বুঝলি না..!!

বলে কিনা,থাক তবে বিয়ে করবো না, আমিও দেখছি আমায় বিয়ে না করে যায় কোথায়..!!

ইষ্ট বেঙ্গল কে যদি আজ হারাতে না পারি তাহলে আমার নামও উজানী রয় নয়..!!

অন্তরা শুধু বললো আজ ইষ্ট বেঙ্গল হারেনি রে,আজ সবথেকে বেশি ব‍্যবধানে জিতেছে, শিগগির ধর দাদাকে যা..!!

উজানী লজ্জা রাঙা মুখে একটু হাসলো,তারপর আর সময় নষ্ট না করে ছুটলো দ্বৈপায়নের পেছনে।।....

 

..... সামনের অগ্রহায়ণে বিয়ে উজানী আর দ্বৈপায়নের।

আপনাদের সকলের নিমন্ত্রণ রইল। আসবেন তো এদের পরবর্তী জীবনের জন্য আশীর্বাদ করতে??....!!

 


মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ঝড়ের আড়ালে- দোলা সাহা

  অসহায় স্তব্ধতায় বুক দুরু দুরু; ক্ষনিক আশা যাহা ছিল মনে, ভাঙিল তা প্রবল করাঘাতে। বেদনার গ্লানি, আর শোকাতুর মন বাধিল ক্ষনিক আশা একটু স্নেহের পরশ জরাহীন ভারতবর্ষ মুক্ত করো সবে হারিয়ে যেতে দেবনা আমরা গভীর অন্ধকারে শত শত ক্ষত ভরিয়ে তুলব- গভীর মমতায় ভরা স্নেহের প্রলেপে।

অন্য পুজো - পিনাক

  ১ অনেকদিন ধরেই ছেলেটা বায়না ধরেছে এবার পূজোয় একটা নতুন জিন্সের প্যান্টের জন্য। বছরদুয়েক আগে ওর বাবা অন্ধ্রে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়েছিলো, তারপর থেকে আর ফেরেনি। এখনো পর্যন্ত তার কোনো খোঁজখবরও পাইনি সে।পাঁচবাড়ি দুইবেলা কাজ করে কোনোমতে সংসারটা টেনেটুনে চলে যায় আর মিডডে মিলের দয়ায় ছেলের একবেলা পেটটা কোনোরকমে ভরে যায় রোজ। অনেক ইতস্তত করে আজ বড়বাড়ির বৌ এর কাছে পাঁচশ টাকা চেয়েই বসেছিল ফুলমনি ছেলের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। অনেকদিনের বিশ্বস্ত লোক, দু'বছরে একদিনও কামাই করেনি:বড়বাড়ির বৌ তাই টাকার কথাতে একবারের বেশী দুবার ভাবেনি।  আজ বিকেলে মনটা বেশ খুশি ছিল ফুলমনির। টুসিদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ি না ফিরে সোজা চলে গিয়েছিল বড়রাস্তার ধারে কাঁচের দরজা দেওয়া জামাকাপড়ের দোকানটার দিকে। রাস্তায় গাড়ি বেশী ছিলো না তখন; দোনোমোনো করে রাস্তাটা পেরোতে গিয়েছিল সে। বকুলতলার দিক থেকে বিকট শব্দ করে হঠাৎ একটা গাড়ি চলে আসে দানবের মতো! তারপর... মায়ের ডাকে ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে যায় পল্লবের! ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে সে বিছানায়... ২ ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে শ্যমলকে বাইক চালিয়ে রোজই ফিরতে হয় অফিস থেকে। আজ অফিস থেকে বেড়িয়ে অফিসের ...

পচন- মনোজ কুমার সরকার

  আজ যে কাহিনীর অবতারণা করতে চলেছি পাঠকের কাছে তা নিছক একটি গল্প হলেও আসলে আমার জীবনেই এই বিচিত্র ঘটনাটি ঘটেছিল। অন্তত সেদিন একবিংশ শতাব্দীর যুক্তিবাদী শিক্ষিত মানুষ হওয়া সত্বেও আমি এই ঘটনার জটিল রহস্যের কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। সেই বিচিত্র ঘটনার দর্শকের ভূমিকা নেওয়া ছাড়া সেদিন আমার আর কিছুই করার ছিল না। বছর দশেক আগের কথা। সেবার গ্রীষ্মের ছুটিতে গেলাম মামার বাড়ি বেড়াতে ।মা, বাবা, ভাই ও আমি অর্থাৎ সপরিবারে ।আমার মামাবাড়ী রানাঘাটে কাপাস ক্যাম্পের কাছাকাছি হরিনাথপুরে। হরিনাথপুর একটি ছোট কলোনি বিশেষ ।দেশভাগের পর বহু ছিন্নমূল মানুষ সেখানে পাকাপাকি তাদের বসতি স্থাপন করেছিল। দিদিমা প্রায়ই বলতেন এখানে আগে ছিল শুধুই জল কচুর বন আর আঁশ শেওড়ার ঝোপ। এমনকি আমি নিজেও ওই অঞ্চলে গিয়ে বেশ কিছু পরিত্যক্ত জলা জমি দেখেছি। প্রোমোটারের নেক নজরে পড়লে সেখানে হয়তো ফ্ল্যাটবাড়ি উঠতে পারত। এমনিতে হরিনাথপুর জায়গাটা আমার ভীষণ প্রিয়। আমরা কলকাতার মানুষ। গ্রামবাংলায় আসি একটু টাটকা বাতাসের খোঁজে, আর হরিনাথপুরে সেসব অফুরন্ত। এমন একটি চমৎকার জায়গায় এসে এত ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হবে যদি আগে জানতাম তাহলে সে...