সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কালাহান্ডির মানুষখেকো- সৌরভ সাউ

 


পুব দিক থেকে পরতে পরতে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছিল। কিছুক্ষণ আগে থেকে বৃষ্টি টাও শুরু হয়ে গেল। প্রথমে ফিস ফিস করে তার পর ঝিরঝির করে। আমি যে জিরহুল গাছটায় বসে আছি সোজা আর ঝাঁকড়া বলে এখনো গায়ে বৃষ্টির ছাঁট লাগছে না। সামনে ব্যাসল্ট পাথরের স্তুপটা বৃষ্টির জলে ভিজে চকচকে হয়ে উঠেছে। এমনিতেই কালো হয় এই ব্যাসল্ট পাথর। তার ওপর আবার জল পড়ে কালো রঙ আরো ফুটে উঠেছে। চারিদিক থেকে শিলাজতুর গন্ধ উড়ছে। পাথরের স্তুপটা ফুট ত্রিশেক উঁচু হয়ে আবার সমান হয়ে গেছে উওরের দিকে। ওদিকটায় ঘন জঙ্গল। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হতে বেশি দেরি নেই। উওরের জঙ্গলের দিক থেকে চোখের পলক পরতে না পরতেই গোটা দশেক অতিকায় হাতি নেমে এলো পাথরের ঢাল বেয়ে। জল পড়ে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় একটা বাচ্ছা হাতি হাত পাঁচেক ওপর থেকে হরকে পড়ল পাথর গুলোর পায়ের কাছে। ওদিকে দেখতে গিয়েই একটা মাদি হাতির চোখ পড়ে গেল ফুট চল্লিশেক ওপরে গাছের ওপর বসা আমার দিকে। ব্যাস আর যাই কোথায়! ওত বড় দানবটা উপত্যকা কাঁপিয়ে তেড়ে এলো আমার দিকে। শুঁড় তুলে এক পেল্লাই গর্জন করে বন পাহাড় চমকে দিল। মূহুর্তের মধ্যেই গাছের নিচে এসে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে জিরহুল গাছের মোটা গুঁড়ি টা ভীষণ রাগে উপড়ে ফেলতে চাইল। ততক্ষণে বাকি হাতি গুলোও গাছের চারপাশে জড়ো হয়ে তর্জন গর্জন করে চলেছে সমানে। কতকটা পুরোনো লোকাল ট্রেনের হর্ণ সামনে থেকে শুনলে যেমন অনুভূতি হয়। এত ভয়ঙ্কর আওয়াজের মধ্যে যে কারো নার্ভাস সিস্টেম ফেল মেরে দেবে। কোনো রকমে গাছের ডাল জড়িয়ে বসে রইলাম চুপচাপ। বেশ কিছু'ক্ষণ আস্ফালন করে যখন বুঝল আমার নাগাল পাবে না একে একে চলে গেল। শেষে বড় মাদি হাতিটা যে হয়ত দলের নেত্রী শুঁড় তুলে ধমক দিয়ে নেমে গেল দক্ষিণের উপত্যকায়। যেন ওদের বাচ্ছা হরকে যাওয়ার জন্য আমিই দায়ী। কিছুক্ষণ পর ধাতস্থ হয়ে আবিষ্কার করলাম বৃষ্টি থেমে গেছে। মনে হল হাতিদের এই বৃংহনের দাপটে বরুণদেব থমকে গেলেন। 

আমি পশ্চিম দিকে মুখ করেই বসেছিলাম। বৃষ্টি থেমে গেছে আগেই। এবার গোটা পশ্চিমের আকাশে মেঘ ফিকে হয়ে অস্তগামী সূর্যের কমলা আভায় রাঙা হয়ে উঠল খানিক আগের ছাই রঙা মেঘ গুলো। ঐ আলোয় গোটা জঙ্গল এক অপূর্ব রঙে রেঙে উঠল। বৃষ্টি ভেজা গাছেদের পাতায় পাতায় অদ্ভুত সুন্দর জেল্লায় ভরে দিল শেষ বিকেলের কনে দেখা আলো।  চারিদিকে পাখিদের কল কাকলিতে একটু আগের ট্রমা মনেই থাকল না সমস্ত মন খুশিতে ভরে উঠল। একটা ফুরফুরে হাওয়ায় বৃষ্টি ভেজা বনের গন্ধ উড়ে এসে মনকে বিবশ করে দিল। 

যারা বলে দীর্ঘদিন জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরলে মানুষের সব জাগতিক অনুভূতি শুকিয়ে যায় তারা আসলে ডাহা মিথ্যা কথা বলে। জঙ্গলেই মানুষের অনুভূতির প্রকাশ প্রকট হয়। প্রকৃতির সাথে একাত্ম হলেই মনের বিকাশ পরিপূর্ণ হয়ে বলে আমার ধারণা। তবে এ ব্যাপারে মনোবিদরা ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবেন।

এত সব ভাবনা ভাবতে ভাবতেই ঝুপ করে অন্ধকার হয়ে গেল। দূরে শাল পিয়াশাল গামহার গাছের মাথায় গোধূলির আলো নিভে গেল। জঙ্গলে যারাই এই বিকেল থেকে সন্ধের এই বিবর্তন দেখেছেন, তারা জানেন কিভাবে চোখের পলক পড়ার আগে অন্ধকার নেমে আসে।

 ঠায় আধঘন্টা বসে থেকে চোখ কিছু কিছু সয়ে এলো অন্ধকারে। এতক্ষণ অন্ধকারে যেন দমবন্ধ হয়ে আসছিল। ঠায় ডানহাতে ধরা ভারী ম্যাগনামের ডবল বোরের রাইফেল টা বাঁহাতে নিয়ে আড়মোড়া ভাঙলাম নিঃশব্দে। মানুষখেকোর অপেক্ষায় বসে থাকলে কোনো রকম আওয়াজ করা বা নড়াচড়া বারণ। সামনে হাত চল্লিশেক দূরে ব্যাসল্ট পাথর গুলোর পায়ের কাছে একটা খাঁজ মত পাথরের কাছে পরে রয়েছে বছর ত্রিশেক বয়সী ওঁরাও যুবতীর প্রায় নগ্ন আদ-খাওয়া নিথর দেহটা।

 আজ ভোর রাতেই টি-২৪ বাঘে ধরেছিল ওকে এখান থেকে প্রায় কিলোমিটার দুয়েক দূরের যে ওঁরাও বস্তি টা রয়েছে সেখানে। ওরা দল বেঁধে জঙ্গলে কাঠ কাটতে যাচ্ছিল। আর তখনই এই অঘটন। মেয়েটার পাশ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে টুঁটি চেপে ধরেছিল বাঘটা। তারপর এক ঝটকায় গলা কামড়ে একটা পাহাড়ি নালার ওপাশে চোখের আড়াল হয়েছিল লাশ শুদ্ধু- এমনটাই জানালো গ্রামের বাকিরা, যারা তখন ঐ মেয়েটার সঙ্গে ছিল ঐ সময়। একটু আলো ফুটতেই গ্রামের ছেলেরা টাঙ্গি বল্লম নিয়ে ঢুকেছিল জঙ্গলের যেদিকে মেয়েটাকে নিয়ে উধাও হয়েছিল বাঘটা। কিন্তু মানুষখেকো বাঘের মোকাবিলা করার সাহস কারোই ছিল না। বাঘটা মানুষের চেঁচামেচি তে বিরক্ত হয়ে আরো পশ্চিমে লাশ টেনে আনে এখানে এই পাথর গুলোর আড়ালে।

 এত দক্ষিণের জঙ্গলে এর আগে বাঘ টা আসেনি, তাই এদিককার মানুষজন নিশ্চিন্তেই ছিল। আজকের প্রায় দিন এগারো আগে কান্দাপালি ডুমুরুপালির কাছে একটা বছর পনেরোর ছেলেকে ধরেছিল টি-২৪ বাঘটা। এখন ভারতের জঙ্গলে সব বাঘের ই এরকম সংখ্যা দিয়ে নাম রাখা হয়। তবে এখন অবশ্য এই বুড়ো পুরুষ বাঘটা কালাহান্ডির নরখাদক বলেই কুখ্যাতি পাচ্ছে। এর আগে মোট পাঁচ জনকে মেরেছে বাঘটা বুধাখোল সোমাঙ্গির জঙ্গলে। 

 কালাহান্ডির আইএফএস সৌমেন আমায় খবর দিয়েছিল আগের সপ্তাতেই। পরশু দিন এসে পৌঁছেছিলাম ওর ফুলবনির বাঙলোতে। কালাহান্ডিতে সচরাচর পর্যটক আসেই না বলতে গেলে। হালে দারিংবারি রেঞ্জ খুব জনপ্রিয় হয়েছে বাঙালী পর্যটকদের কাছে। তবে কালাহান্ডির জঙ্গল দারিংবাড়ির থেকেও আরো সুন্দর। আর দারিংবাড়ি কে যে কাশ্মীর বলা হয় উড়িষ্যার এই খেতাবের আমি ঘোর বিরোধী কারণ কালাহান্ডি দারিংবাড়ির থেকেও আরো বেশি ঠান্ডা আর আরো বেশি বন্য পরিবেশ উপহার দেয়। 

 বেলা এগারোটা নাগাদ যখন রেঞ্জার-ডিএফও মারফত খবর পাওয়া গেল, সঙ্গে সঙ্গেই আমরা প্রায় ঝড়ের বেগে জীপ চালিয়ে দুপুর হওয়ার সাথে সাথেই পৌঁছে গেলাম কালাহান্ডির গহনে এই নাম না জানা ওঁরাও বস্তিতে। মোড়লের মুখে সব শুনে দু'জন লোককে সঙ্গে নিয়ে রওনা হলাম অকুস্থলে। বিকেল চারটে নাগাদ এই জিরহুল গাছটা দেখে উঠে বসলাম আমার বন্দুক আর জল নিয়ে। আর আমার সাথে আসা ওই ওঁরাও বস্তির লোক দুটো নিজেদের মধ্যে জোরে জোরে কথা বলতে বলতে ফিরে গেল বস্তির দিকে। ওদের বলে রেখেছিলাম আজকে রাতে আর এমুখো না হতে, যতই বন্দুকের আওয়াজ হোক না কেন। সেই থেকেই ঠায় গাছের উপর বসে রয়েছি।

  এখন আন্দাজ প্রায় সন্ধ্যা সাতটা সাড়ে সাতটা বাজে। হাতে হাত ঘড়ি আছে কিন্তু ভালো আলো না থাকায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছেনা ঠিক কটা বাজে। হঠাৎ বাঁদিকের জঙ্গল থেকে একটা অদ্ভুত আওয়াজ ভেসে এলো। তারপর আবার বেশ কিছুক্ষণ সব চুপচাপ। ধীরে ধীরে পূবের দিক থেকে একটা স্নিগ্ধ হওয়া উঠলো।

এইরকম হওয়াতেই ভীষণ ঘুম পায় আমার। একটা বুনো ফুলের তীব্র গন্ধে মাথাটা ভরে উঠলো; সাথে সাথেই মনের মধ্যেও ভাবনারা বুরবুরি কেটে উঠল।

 

এই বাঘটাকে মাত্র কয়েকদিন আগেই নরখাদক ঘোষণা করা হয়েছে, পাঁচ নম্বর মানুষটা মারার পরে। সাধারণত এখন ভারতের জঙ্গলে মানুষ মারলেও বাঘকে নরখাদক ঘোষণা করা হয় না। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে নির্দিষ্ট বাঘকে শনাক্ত করে ট্রাঙ্কুলাইজ করে কোনো চোট-আঘাত থাকলে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়। আর তারপর কোনো চিড়িয়াখানা বা ঐরকম কোন রেসকিউ সেন্টারে রাখা হয়, জঙ্গলে আর ছাড়া হয় না। কিন্তু এই বাঘ টা যেহেতু বুড়ো হয়েছে তাই এর জন্য আর তেমন কিছু বরাদ্দ হলো না। এমনিতেই উড়িষ্যার বনদপ্তরের ওপর চাপ ছিল সরকারের। কিছুদিনের মধ্যেই উড়িষ্যায় ভোট রয়েছে; তাই সরকার এখন চাইছে না মানুষের মধ্যে এই বাঘ নিয়ে কোনো রকম অসন্তোষ সৃষ্টি হোক।

আর এইসব মিলিয়েই বাঘের নিয়তি, মৃত্যু, নিশ্চিত করা হয়েছে।

কালাহান্ডির আইএফএস সৌমেন আমার বন্ধু। সেই সূত্রেই ও আমাকে প্রথমে খবর দিয়েছে বাঘটা মারার জন্য। যদিও এর আগে আমি একবারই মাএ মানুষখেকো মেরেছি। তবুও চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি। আর আমি আজকের দিনটাই দিতে পেরেছি কাজ থেকে ছুটি নিয়ে। আজ ই বাঘ টা মারতে না পারলে আমায় ফিরে যেতে হবে। তারপর সৌমেন সময় পেলে চেষ্টা করবে, না হলে অন্য কেউ।

 

এমনিতে বাঘ কিন্তু উড়িষ্যার জঙ্গলের স্বাভাবিক খাদ্যের প্রাচুর্যের কারণে সচরাচর মানুষখেকো হয়না এখন। তবে এইবার মানুষখেকো হওয়ার পিছনে হয়তো মানুষেরই হাত রয়েছে এই বাঘের‌। কোনো আনাড়ি শিকারীর গুলি তে হয়তো জখম হয়েছে, তাই নিজের স্বাভাবিক খাদ্য না পেয়ে সহজ শিকার মানুষ মারতে হচ্ছে তাকে।

এসব ছাইপাঁশ যখন ভাবছি, হঠাৎ করেই দক্ষিণের উপত্যকায় একটা কোটরা ডেকে উঠলো।

ঐ, বাঘ মশাই আসছেন রাজার মত হেলে দুলে!

 

 আশপাশের জঙ্গলে হুটোপুটি পড়ে গেল।  বাঘ মিনিট কয়েকের মধ্যেই মড়ির কাছে এসে পৌঁছে গেল। অন্ধকারে দেখা না গেলেও, বেশ বোঝা গেল, বিরাট বাঘ! এত বড় বাঘের উপস্থিতিতেই যেন গলা শুকিয়ে গেল। হৃদপিণ্ড টা যেন বুকের খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হল। কোনো রকমে নার্ভ শক্ত করে বন্দুকটা উঠালাম। আন্দাজে নিশানা নিতে যাবো অমনি একটা প্যাঁচা কোথা থেকে এসে দূরগুম দূরগুম করে ডেকে উঠল, মাথার ওপর; বাঘটা, যেখানে বসে ছিল একটা পাথরের ওপর। বাঘটা ঔ ডাকে ওপর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে উঠে গেল। এদিক ওদিকে ঘোরাঘুরি করে মড়ির সামনে এসে বসলো আমার উল্টো দিকে। আমি ঘাড়ে নিশানা নিলাম, আন্দাজে। খেতে যাবে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করব এরকম একটা ঠিক করেছি...

কিন্তু বরাত খারাপ। হাত কেঁপে গিয়ে ওঠাৎ করে গুলি বেরিয়ে গেল।

তবে ঘাড়ে নিশানা করা থাকলেও মনে হল ঘাড়ের একটু উপর দিয়েই বেরিয়ে গেল গুলিটা। সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় ব্যারেল থেকেও গুলি করে দিলাম, ঘাড় লক্ষ্য করে। এবার মনে হল গুলিটা ঘাড় ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে একটা গর্জন করে লাফিয়ে উঠে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেল বাঘ। পাহাড়-জঙ্গল কেঁপে উঠল এই গর্জনে। আমি বুঝলাম আমি শিকারে অসফল হয়েছি। এই বাঘ আর এমুখো হবে না আজ রাতে। তবে এই মুহূর্তে গাছ থেকে নেবে যাওয়ার ও কোন উপায় নেই। তাহলে তা আত্মহত্যার শামিল হবে। অতঃপর নিরুপায় হয়ে সারা রাত গাছের উপর বসে থাকতে হল। সারা রাতে আর একবারও বাঘ এলোনা এরকম আনাড়ি শিকারির গুলি খেতে। ভোরের আলো ভালো করে ফুটে ওঠার পর গাছ থেকে নামলাম সন্তর্পণে। বন্দুক টা রেডি পজিশনে ধরে আস্তে আস্তে এগোতে থাকলাম ওঁরাও বস্তির দিকে। আন্দাজ কিলোমিটার খানেক মত আসার পর ওঁরাও লোকগুলোকে আসতে দেখলাম। তারপর তাদের গত রাতের ঘটনার কথা বললাম সবিস্তারে। আর মৃতদেহ তুলে নিয়ে আসার কথা জানালাম সৎকারের জন্য। 

গ্রামে ফিরে সৌমেনের রেখে যাওয়া জীপ আর তার ড্রাইভার ললিতের সাথে ওঁরাও দের বস্তি থেকে বিদায় নিয়ে চললাম ফিরে ফুলবনীর দিকে। এই মানুষখেকো বাঘ সৌমেন মারবে, না হলে অন্য কোন শিকারি।

 কালাহান্ডির পাহাড়ি ঘাটের উঁচু-নিচু কাঁচা পথের ওপর দিয়ে জঙ্গলের সবুজ চিরে ছুটে চলল জিপ।

  চারিদিকে প্রথম সকালের সোনা রোদে উড়িষ্যার গহীন জঙ্গলের অপার্থিব সৌন্দর্য সারারাতের ঘুমহীন ক্লান্ত চোখে স্নিগ্ধ আদর মাখিয়ে দিল।

   দুচোখের পাতা এক হয়ে এলো চলন্ত জিপের হওয়ায়.....

 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ঝড়ের আড়ালে- দোলা সাহা

  অসহায় স্তব্ধতায় বুক দুরু দুরু; ক্ষনিক আশা যাহা ছিল মনে, ভাঙিল তা প্রবল করাঘাতে। বেদনার গ্লানি, আর শোকাতুর মন বাধিল ক্ষনিক আশা একটু স্নেহের পরশ জরাহীন ভারতবর্ষ মুক্ত করো সবে হারিয়ে যেতে দেবনা আমরা গভীর অন্ধকারে শত শত ক্ষত ভরিয়ে তুলব- গভীর মমতায় ভরা স্নেহের প্রলেপে।

অন্য পুজো - পিনাক

  ১ অনেকদিন ধরেই ছেলেটা বায়না ধরেছে এবার পূজোয় একটা নতুন জিন্সের প্যান্টের জন্য। বছরদুয়েক আগে ওর বাবা অন্ধ্রে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়েছিলো, তারপর থেকে আর ফেরেনি। এখনো পর্যন্ত তার কোনো খোঁজখবরও পাইনি সে।পাঁচবাড়ি দুইবেলা কাজ করে কোনোমতে সংসারটা টেনেটুনে চলে যায় আর মিডডে মিলের দয়ায় ছেলের একবেলা পেটটা কোনোরকমে ভরে যায় রোজ। অনেক ইতস্তত করে আজ বড়বাড়ির বৌ এর কাছে পাঁচশ টাকা চেয়েই বসেছিল ফুলমনি ছেলের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। অনেকদিনের বিশ্বস্ত লোক, দু'বছরে একদিনও কামাই করেনি:বড়বাড়ির বৌ তাই টাকার কথাতে একবারের বেশী দুবার ভাবেনি।  আজ বিকেলে মনটা বেশ খুশি ছিল ফুলমনির। টুসিদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ি না ফিরে সোজা চলে গিয়েছিল বড়রাস্তার ধারে কাঁচের দরজা দেওয়া জামাকাপড়ের দোকানটার দিকে। রাস্তায় গাড়ি বেশী ছিলো না তখন; দোনোমোনো করে রাস্তাটা পেরোতে গিয়েছিল সে। বকুলতলার দিক থেকে বিকট শব্দ করে হঠাৎ একটা গাড়ি চলে আসে দানবের মতো! তারপর... মায়ের ডাকে ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে যায় পল্লবের! ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে সে বিছানায়... ২ ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে শ্যমলকে বাইক চালিয়ে রোজই ফিরতে হয় অফিস থেকে। আজ অফিস থেকে বেড়িয়ে অফিসের ...

পচন- মনোজ কুমার সরকার

  আজ যে কাহিনীর অবতারণা করতে চলেছি পাঠকের কাছে তা নিছক একটি গল্প হলেও আসলে আমার জীবনেই এই বিচিত্র ঘটনাটি ঘটেছিল। অন্তত সেদিন একবিংশ শতাব্দীর যুক্তিবাদী শিক্ষিত মানুষ হওয়া সত্বেও আমি এই ঘটনার জটিল রহস্যের কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। সেই বিচিত্র ঘটনার দর্শকের ভূমিকা নেওয়া ছাড়া সেদিন আমার আর কিছুই করার ছিল না। বছর দশেক আগের কথা। সেবার গ্রীষ্মের ছুটিতে গেলাম মামার বাড়ি বেড়াতে ।মা, বাবা, ভাই ও আমি অর্থাৎ সপরিবারে ।আমার মামাবাড়ী রানাঘাটে কাপাস ক্যাম্পের কাছাকাছি হরিনাথপুরে। হরিনাথপুর একটি ছোট কলোনি বিশেষ ।দেশভাগের পর বহু ছিন্নমূল মানুষ সেখানে পাকাপাকি তাদের বসতি স্থাপন করেছিল। দিদিমা প্রায়ই বলতেন এখানে আগে ছিল শুধুই জল কচুর বন আর আঁশ শেওড়ার ঝোপ। এমনকি আমি নিজেও ওই অঞ্চলে গিয়ে বেশ কিছু পরিত্যক্ত জলা জমি দেখেছি। প্রোমোটারের নেক নজরে পড়লে সেখানে হয়তো ফ্ল্যাটবাড়ি উঠতে পারত। এমনিতে হরিনাথপুর জায়গাটা আমার ভীষণ প্রিয়। আমরা কলকাতার মানুষ। গ্রামবাংলায় আসি একটু টাটকা বাতাসের খোঁজে, আর হরিনাথপুরে সেসব অফুরন্ত। এমন একটি চমৎকার জায়গায় এসে এত ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হবে যদি আগে জানতাম তাহলে সে...