নূপুর চোখের জল মুছতে মুছতে ছুটে আসে -তার নিস্তব্ধতার সর্বশ্রেষ্ঠ আস্তানায় |
অনেকটা পথ এসেছে সে - পিছনে ফিরে তাকায়নি একবারেও!
পায়ের একটা তোড়া নরম ঘাসের আদলে কোথায় যেন ছিঁড়ে গেছে!
ভালো করে দেখে নেয়-
"ইসস অনেকটাই কেটেছে!"-
হাত বুলিয়ে নেয় আলতো করে, ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে |
অন্য হাতে "কাগজের নৌকো" |
উঠে দাঁড়িয়ে দেখে নেয় ভালোকরে চারিদিকটা -
শুধু নির্জনতা!-আর নদীর জলটা ঝিকমিক করছে- মৃদুমন্দ বাতাসে,
গাছের পাতাগুলো দোলতে দোলতে লুকোচুরি খেলছে -মেঘের বুক চিরে আসা রোদের রোশনার সাথে!
চোখ বন্ধ করে সে- বুক ভরে নেয় একটা দীর্ঘশ্বাস!
উপভোগ করে এই নির্জনতা -
তার এই বারো বৎসর বয়সেই অগুন্তি তিক্ত অভিজ্ঞতা!
মনের দেয়ালে অনুরণিত হয় শুধুই বাবার নেশাতুর গর্জন আর -মায়ের চিৎকার করে ভাঙা ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ার শব্দ আর অবচেতন দেহ টা!
আর ভাবতে পারেনা সে! চোখের পর্দা গরম হয়ে আসে!
তার মনের ছোট্ট প্রজাপতির- পাখা গুলো কে যেন আস্তে আস্তে ছিঁড়ে ফেলছে!-
পিষে দিচ্ছে তার প্রিয় সব থেকে প্রিয় -'ঝুমঝুমি' নামে পুতুলটার মাথাটা মাটির সঙ্গে!
হৃদপিন্ডটা পাঁজরার খাঁচাতে ধড়াস ধড়াস করতে করতে হঠাৎ যেন দরজা খুলে বেরিয়ে আসতে চায়!
স্নায়ু গুলো ঢিলে হয়ে আসে |
চোখ খুলে দেখতে থাকে তার হাতে বানানো ছোট্ট 'নৌকোটাকে'|
আরেকটা দমকা হাওয়া জানিয়ে দিয়ে গেলো সময় হয়েছে!
উঠে দাঁড়িয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে নেমে আসে সে নদীর তীর বেয়ে-
প্রকৃতি যেমন কিছুই জানেনা!
জানেনা নুপুরের কথা - যে নুপুরের ছন্দে মেতে থাকতো একটা সুন্দর প্রাণবন্ত সংসার!
সেই ছন্দ আজ যেন তাল হারিয়ে একটা অপ্রাকৃতিস্থ কুঁয়োয় বিসর্জন দিয়েছে নিজের প্রাণ ভ্রমরাকে!-
শুধু পরিত্যক্ত খোলসটা পড়ে আছে বেহায়ার মতো!
ফুঁপিয়ে ওঠে নূপুর!-কিন্তু পরক্ষনেই সামলে নেই নিজেকে |
হাতে বানানো নৌকোটাকে ভাসিয়ে দেয় স্রোতের অনুকূলে |
অস্বাভাবিক অস্থিরতা আর অসামঞ্জ্যস্যকর বদমেজাজি তরঙ্গ গুলো যেন জীবনের নিষ্ঠুরতাকে নির্লজ্জভাবে প্রকাশ করেই চলেছে - প্রতিটি ঝাপটাতে!
এদিক-ওদিক দুলতে দুলতে একদিন হয়তোএই তরঙ্গেই মিশে যাবে কাগজের অস্তিত্ব !
এক সমসত্ত্ব মিশ্রনে পরিণত হবে প্রবাহ মান এই অভিলাসী জলধারায়!-
নিস্পলক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে নূপুর- ঢেউ গুলোর এই বেলেল্লাপনা |
হঠাৎ! মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আসে তার|
ভাসতে ভাসতে নৌকোটা কোথায় যেন স্থির!
আর এগোচ্ছে না, হয়তো বা জড়িয়ে গেছে আগাছার জালে!
তার দৃষ্টি চঞ্চল হয়ে ওঠে রোজকার মন খারাপের মত আজও সে এসেছিলো একটা চাপা আর্তনাদ বুকে নিয়ে মূক হয়ে!
একেই ঘাটে!
আশা এই যদি তার মন খারাপের মেঘ একটু খানি সরে |
প্রায়ই দেখতো - নৌকোটি জল তরঙ্গে হারিয়ে যেতে চোখের সামনে -
কিন্তু আজ তার ব্যতিক্রম কেন!,
কিছু দূর যেতেই চিৎকার গুলোর হাতছানি দেয় নুপুরের অবচেতনে -
কিছুদূর যেতেই পথ ঘুরিয়েছে নৌকার মুখ খানি যেন কে!-
ওই তো! কেউ কি ওখানে!
আগাছার মধ্যে থেকে তুলে নিয়েছে তার বানানো 'কাগজের নৌকোটাকে'-
নুপুরের নৌকো তো কখনো এরকম করে না!
নুপুরের দৃষ্টি আবক্ষ, নিস্পলক, স্থির - নাড়ীর স্পন্দন কি স্থির!-
না হৃদস্পন্দন চঞ্চল?
দূরে-দূরে ওই মানুষটার দিকে |.....

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন