বহুদিন আগের কথা। আমি তখন অবিভক্ত বিহারের একটি অঞ্চলে কারখানার সুপারভাইজার।বেশিরভাগকর্মচারী অবাঙালী হলেও তাদের মধ্যে জনা পাঁচেক বাঙালীও ছিল। এদের মধ্যে আবার প্রিয়তোষ ছিল ম্যানেজার। ঐ যা হয়, ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। তাছাড়া ও ছিল আমার মতই গ্রাজুয়েট। সত্যি কথা বলতে কি সারাজীবনে প্রিয়র মত বন্ধু আর কখনো পাইনি। আমি শুরুতেই মধুপুরের কাছে ঝিল্লি এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম। বাড়িওয়ালা সুখান রাম একদিন বলেছিল,"একটা কথা বলি বাঙালি বাবু, কিছু মনে করবেন না, এখানে আপনি একা থাকেন, কোনো বন্ধু জুটিয়ে লিন, বাড়িভাড়া আধা হয়ে যাবে"। আমারও কথাটা মনে ধরল। পরদিন কাজের ফাঁকে চুপিচুপি প্রিয়তোষ কে কথাটা বলতেই ও যেন হাতে চাঁদ পেল। খুবই খুশি হয়ে বলল,"এ তো খুবই ভালো প্রস্তাব, লোভনীয় তাতে সন্দেহ নেই, আমি যেখানে এখন থাকি তাকে ভদ্র পাড়া বলা চলে না,বুঝলে ভায়া কিছু চাষাভুসো খোট্টাদের বাস সেখানে। তারপর রাত্রিবেলা মাতাল হয়ে যা শুরু করে তাতে ঘুম তো দূরের কথা টেকা দায় হয়ে পড়ে"। আমি বাড়ি বদলানোর কথা বলতেই ও বললো,আজকে রবিবার, খুবই ভালো সময়। ওইদিন ছুটি আছে ফলে আমার মালপত্র নিয়ে যেতে কোনো প্রবলেম হবে না। মালপত্র তেমন কিছু নেই। একটা সুটকেস, বিছানা আর গোটাকতক গল্পের বই"। আমি বললাম পড়াশুনাটা এখনও ছাড়তে পারলে না ভাই"।
ও বলল,"না ভাই, প্রতিবছর কলেজস্ট্রিট থেকে বেশ কিছু বই কেনা চাই। আমার বাড়ি নারকেলডাঙ্গা। ওখান থেকে বইপাড়া খুব কাছেই। সত্যি কথা বলতে কি দেশে গেলে আমার বই কেনা চাই । আমি বললাম, "আজ প্রায় বারো- তেরো বছর হল লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে দিয়েছি ।শুরুতে টিটাগড়ে কাগজের কলে কাজ করতাম। মাইনে কম খাটুনি বেশি। ঠিক পোষালো না । তার উপরে গিন্নির ঘ্যানঘ্যান।তাই একপ্রকার অগস্ত্য যাত্রা করেছি বলতে পার।
সকাল আটটা থেকে কাজ শুরু হতো। দুপুর একটায় টিফিন তারপর সেকেন্ড হাফ চলত প্রায় ছয়টা পর্যন্ত। কখনো কখনো নাইট ডিউটি ও থাকত। প্রিয়তোষ কে দেখতাম সব সময়ই কি যেন ভাবে । দু-একবার প্রশ্ন করেও উত্তর পাইনি । দু-একবার শুধু বলেছিল রান্নায় নুন ঠিক আছে? নুন বেশি হলে অবশ্যই বল। ছেনিয়ার মাকে বলে কোনও লাভ নেই ওটা আমাকেই বল। একদিন বিরক্ত হয়ে বললাম দেখ ভাই তুমি তো রান্না করো না তাহলে তোমায় নুন বেশি হওয়ার কথা বলব কেন? আরো অনেক কথা আছে বলবার মতো। এরপর প্রিয় একটা আশ্চর্য কথা বলে বসল । হঠাৎই
ফ্যাকাসে মুখে বলল," রক্তের স্বাদ কেমন জান?"আমি অসহিষ্ণুভাবে বললাম," পাগলামো ছাড়। আমি লক্ষ্য করছি তুমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছ, বড্ড অচেনা লাগছে তোমায়। কি হয়েছে ভাই? শরীর খারাপ? না গিন্নির জন্য মন খারাপ?"
এর উত্তরে প্রিয়তোষ আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে বলল," এখনো সময় আছে।এ চাকরি তুমি ছেড়ে দাও।"আমি খুবই অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে চাইতে একটা অদ্ভুত গল্প সে আমায় বলতে শুরু করল, কিন্তু বিশ্বাস করুন শুনতে গল্পকথা হলেও তা আসলে রৌদ্রোজ্জ্বল বাস্তব , কারণ দৈবক্রমে আমি সেই পৈশাচিক ঘটনার সাক্ষী ছিলাম। তবে সেই মুহূর্তে প্রিয়তোষের কাহিনী স্রোতের মুখে খড়কুটোর মতই হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলাম," এখান থেকে রাঁচি খুব বেশি দূরে নয়। যদি বল তো একবার যোগাযোগ করে দেখতে পারি তোমার জন্য।" তারপর ওকে নরম ভৎসর্নার সুরে বললাম," বিংশ শতকের গ্রাজুয়েট একজন বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি হয়ে তুমি এইসব গাঁজাখুরি বিষয়ে বিশ্বাস কর! আমার তো মনে হয় কারখানার গেঁয় কর্মচারীদের আষাঢ়ে গল্প তোমার মনে দাগ কেটেছে। বিশেষত বেয়ারা কাদের মিঞা আজগুবি গল্প ফাঁদায় একেবারে সিদ্ধহস্ত। আমাকে সেদিন কি বলে জানো, "সাহেব আপনার খুব বিপদ আমার বাত শোনেন ,ই নকরিতে ইস্তফা দেন।আপনারা এক্সপার্ট লোক ।যে কোনোও নকরি পেয়ে যাবেন "।শুনে একটু রাগই হলো আমার। তবুও একটু তেতো হাসি হেসে বললাম , "কেন ?আমাকে তোমাদের পছন্দ নয়? সিং সাহেবকে বল আমার জায়গায় অন্য কোন সুপারভাইজার কে নিয়োগ করতে। শুনলাম তোমাদের নাকি ইউনিয়ন -টিউনিয়ন আছে। সবার সই সমেত একটা পিটিশন দিলেই তো পার।"কাদের মিঞা মুচকি হেসে বলল," আপনি খালি খালি গুসসা করছেন বাঙালি বাবু, আমি আপনার ভালোর জন্যই বলছি। এই কারখানায় বুরা সায়া আছে। বছরে একবার মেশিনগুলোর খুন চাই ।ইনসানী খুন। আপনি দয়া করে ম্যানেজার বাবুকে আমার কথা বলবেন না । আমি গরীব আদমি সাহেব। নকরি না থাকলে খাবো কি ?"আমি ওর কথায় পাত্তা দিইনি। প্রিয় বলল ,"গুরুত্ব দিলেই বোধহয় ভাল করতে। ঘটনা সত্যি ।"
এরপর প্রিয় আমায় যে কাহিনী বলেছিল তা সংক্ষেপে অনেকটা এই রকম, মালিক সুন্দরলাল সিং এর এই কারখানায় বছর কুড়ি আগে প্রভুরাম পাশওয়ান নামে এক কর্মচারী অপঘাতে মারা যায়। শোনা যায় লেদ মেশিনে কি গড়বড় এর জন্য মেশিন বন্ধ হয়ে গেলে ও দেখতে গিয়েছিল।তাতেই বিপত্তি। বিকল যন্ত্র হঠাৎই চলতে শুরু করলে প্রভুর অ্যাপ্রন হুইলে জড়িয়ে ওকে টেনে নেয়। তারপর এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার ঘটে প্রভুরামের দেহটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। অনেক কষ্টে মেশিন বন্ধ করে থেঁতলানো, দলাপাকানো মাংসপিণ্ড উদ্ধার করে সকলে। শোনা যায় ওর স্ত্রী দুর্গা অনেক কান্নাকাটি করেছিল। ওর কোনও ছেলে ছিল না তাই মালিকের হাতে-পায়ে ধরে ক্ষতিপূরণ চেয়েছিল। মালিক সুন্দরলাল প্রথমে চাপের মুখে ক্ষতিপূরণ দিতে স্বীকৃত হলেও পরে কৌশলে তা এড়িয়ে যান।একটা সুইপারের চাকরির জন্য দুর্গা অনেক কেঁদেছিল ।কারখানার মালিক তা তো দিলেনা উল্টে মারধর করে তাকে তাড়িয়ে দিল।এর কিছুদিন পর দুর্গা ও তার মেয়ে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ নাকি ওরই অভিশাপ । বছরে একটা সময় মেশিন আপনাআপনি বিকল হয়ে যায়। তখন তার প্রয়োজন হয় একটি জীবন্ত মানুষের রক্ত দিয়ে স্নান করবার। প্রতিবছর একটি করে বলি গ্রহণ করে সে। মালিক সুন্দরলাল টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে রাখে ।আমি এ কাহিনী মন দিয়ে শুনলে ও ঠিক বিশ্বাস করিনি। মনে মনে হেসে ছিলাম বললেও ভুল হবে না ।কিন্তু অদৃষ্টের লিখন খন্ডাবে কে। পরদিন থেকে একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম ।খাবার অস্বাভাবিক রকমের নোনতা বোধ হতে লাগল।আমি চুপিচুপি ছেনিয়ার মাকে সে কথা বলতে সে বলল," সে কি করে হয় বাবু। আমি জরুরতের চেয়ে বেশি লুন তো দিই না ।এতদিন খানা পাকাচ্ছি, একটু আগেই তো বড়বাবু খেয়ে গেলেন ,কই কিছু তো বললেন না ।"আমি একটু হেসে বললাম," আচ্ছা ঠিক আছে। তবুও তুমি একটু দেখেশুনে নিও।" 'জি' বলে সে চলে গেল। আরো দিন তিনেক কাটল। এর মধ্যে প্রিয়তোষ ক্রমাগত প্রশ্ন করে চলেছে । বিরক্ত হয়ে বললাম , "তোমারও তো নুনে পোড়া লাগতে পারে খাবার? শুধু যে আমারই স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা আছে তা তো নয়।"উত্তরে প্রিয় যা বলল তাতে মনে হলো কেউ যেন আমার গায়ে বরফ ছুঁয়ে দিল। সে বলল," যার মৃত্যুর পরোয়ানা জারি হয় সেই পায় অতিরিক্ত নোনতা স্বাদ ।"তারপর আমাকে আরও চমকে দিয়ে বলল," আজ দিন পাঁচেক হলো আমি ফ্যাক্টরির সবাইকে একে একে প্রশ্ন করেও ঠিক উত্তরটা পেলাম না । এটা অসম্ভব ব্যাপার, কারণ এর আগে যারা মারা গেছে তারা প্রত্যেকেই লবণাক্ত স্বাদের কথা বলেছে।" তারা কারা? এর উত্তরে প্রিয় কয়েকজনের নাম বলল ।যেমন বুধন ,রাঘব ,অজয় ইত্যাদি আমার যেন কি হল। আমি ওকে ব্যঙ্গ করে বলে বসলাম," তোমার মস্তিষ্কে বিকার দেখা দিয়েছে এ তারই পূর্বলক্ষণ বুঝলে ।"কেন জানিনা আমার মনে হলো কথাগুলো আমিই বললাম তো! নাকি আমাকে দিয়ে কেউ বলিয়ে নিল। দিন দুয়েক পর এমন একটা ঘটনা ঘটল যা থেকে সবই দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল। সেদিন অন্তত আমার তো তাই মনে হল। সেদিন সকালে আমার ছোট্ট অফিস ঘরটাতে বসে দিন সাতেকের ছুটির জন্য দরখাস্ত লিখছিলাম ।আমার একমাত্র শ্যালিকার বিয়ে ।দিন দুই আগে গিন্নির চিঠি ও সেইসঙ্গে বিয়ের কার্ডও পেয়েছি ।এমন সময় রামু চৌকিদার এসে বলল ,"সুপারভাইজার বাবু আপনাকে বড় সাহেব ডাকছেন।" চিঠি লেখা শিকেয় তুলে আমি ছুটলাম বড় সাহেবের ঘরে। গিয়ে দেখি রীতিমত একটা মিটিং হচ্ছে সেখানে।আমি ঢুকতেই মধ্যবয়স্ক মোটাসোটা চেহারার সুন্দরলাল সাহেব একটু বিনয়ের সুরে আমাকে বললেন," আসেন আসেন রায় বাবু ।একটা খুব মুসিবতে পড়ে আপনাকে ইয়াদ করলাম। আসলে আমাদের ফ্যাক্টরির লেদ মেশিনে একটা গড়বড় হয়েছে ।"তারপর বলল," প্রিয়ে বাবু বলছিলেন আপনি থরা থরা মেশিন ঠিক করতে পারেন। আমাদের ম্যাকানিক জয় কৃষ্ণ আর মঙ্গল সিং মেশিনের কাছেই আছে। আপনি একটু মেহেরবানী করে সুপারভাইজ করিয়ে দেন।" আমি জানি মালিকের দ্বিতীয় কথাটা খাঁটি মিথ্যে। তবুও হুকুমের চাকর তাই নিমরাজি হয়ে যেতেই হলো ।হয়তো দেখার ভুল হতে পারে তবুও মনে হল প্রিয়র ফ্যাকাশে মুখের দিকে তাকিয়ে সুন্দর লালজী চোখ টিপলেন ।ফ্যাক্টরির আঁকাবাঁকা গোলোকধাঁধা আমার চেনা। তবুও কেমন যেন অচেনা বোধ হল ।কিসের একটা অশুভ ইঙ্গিত মনের মধ্যে খচখচ করছে যেন। ঠিক বুঝতে পারছি না তবুও কিসের টানে যেন এগিয়ে চলেছি ।পথের দু'ধারে জমাট অন্ধকার যেন আজ আরও বেশি বোধ হল। আবর্জনা, মালপত্রের স্তুপ পেছনে ফেলে আমি চলেছি মেশিন ঘরের দিকে। কেন জানিনা আজ খুব মনে পড়ছে আত্মীয় স্বজনের কথা, স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের কথা ।ওদের মুখের দিকে তাকিয়েই তো সুদূর কলকাতার বাবু বাগান থেকে এত দূরে আসা। আর কি দেখা হবে ওদের সঙ্গে ।এসব সাত-পাঁচ ভাবছি, হঠাৎই কাঁধে কার বলিষ্ঠ স্পর্শে চমক ভাঙ্গল।কে?" আমি জয় কৃষ্ণ বাবুজি। চলুন মেশিন ঘরে যাই। আমাদের মনে হয় আপনি পারবেন ওর ঘুম ভাঙাতে। চোলেন বাবু।" আমি পিছন ফিরতেই ওর সহকারী একটা রেঞ্জ বাগিয়ে ধরে বলল," কি হল ,ডর লাগছে বাবু? আভি সব ঠিক হয়ে যাবে ।"বুঝলাম এদের হাত থেকে পরিত্রাণের কোন পথ নেই। খুব আফসোস হলো কি উজবুকের মতোই না কাজ করেছি ।প্রিয়তোষ কে নোনতা স্বাদের কথা বললে ও হয়তো একটা পথ বাতলে দিতে পারত, কিন্তু এখন আমি সাঁড়াশি আক্রমনের মুখে পড়েছি। একদিকে মেশিন, আর অপরদিকে জয়কৃষ্ণের দল।ধীরে ধীরে কখন পৌঁছে গেছি কাল দৈত্যটার সামনে বুঝতেও পারিনি। হঠাৎ জয়কৃষ্ণের আচমকা এক ধাক্কায় দু হাত এগিয়ে পৌঁছে গেলাম মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। আমার খুব কাছেই একটা মৃদু ঘড়ঘড় শব্দ শুনলাম। না , চোখের ভুল নয় মেশিনের কলকব্জায় জেগে উঠেছে রক্তলোলুপ জান্তব আলোড়ন । কিসের অমোঘ আকর্ষণে আমি এগিয়ে চলেছি সেই যান্ত্রিক বেষ্টনের দিকে। আর কয়েক মুহুর্ত পরেই আমার দেহটা পূরণ করবে যান্ত্রিক পিপাসা । উষ্নশোনিতে স্নান করে যন্ত্র দানব আবার ফিরে পাবে তার জান্তব যৌবন। এমন সময় কার প্রচন্ড ধাক্কায় আমি ছিটকে পড়লাম কিছুটা দূরে , জ্ঞান হারাবার আগেই। কার আর্তচিৎকার খান খান করে দিল মেশিন ঘরের নিস্তব্ধতা । আর কিছু মনে নেই ।জ্ঞান ফিরলে নিজেকে খুঁজে পেলাম আমার সেই আস্তানায়। বাড়িওয়ালা বসেছিল উদ্বিগ্ন মুখে ।আমি তাকে প্রিয়র কথা জিজ্ঞেস করতেই সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। ব্যাপার এই আমাকে বাঁচাতেই প্রিয়তোষ নিজেকে সঁপে দিয়েছে মৃত্যুর কোলে। চরিতার্থ করেছে যান্ত্রিক লালসা। তারপর বহু দিন কেটে গেছে। আমি এখন কলকাতায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। তবুও চোখ বন্ধ করলেই ভেসে ওঠে সেই যন্ত্রদানবের স্মৃতি। আজও হয়তো কোনও হতভাগ্যের উষ্ন টাটকা রক্তের প্রয়োজন হয় তার তৃষ্ণা মেটাতে।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন