সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

অক্টোবর, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

লেদ মেশিন- মনোজ কুমার সরকার

বহুদিন আগের কথা। আমি তখন অবিভক্ত বিহারের একটি অঞ্চলে কারখানার সুপারভাইজার।বেশিরভাগকর্মচারী অবাঙালী হলেও তাদের মধ্যে জনা পাঁচেক বাঙালীও ছিল। এদের মধ্যে আবার প্রিয়তোষ ছিল ম্যানেজার। ঐ যা হয়, ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। তাছাড়া ও ছিল আমার মতই গ্রাজুয়েট। সত্যি কথা বলতে কি সারাজীবনে প্রিয়র মত বন্ধু আর কখনো পাইনি। আমি শুরুতেই মধুপুরের কাছে ঝিল্লি এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম। বাড়িওয়ালা সুখান রাম একদিন বলেছিল,"একটা কথা বলি বাঙালি বাবু, কিছু মনে করবেন না, এখানে আপনি একা থাকেন, কোনো বন্ধু জুটিয়ে লিন, বাড়িভাড়া আধা হয়ে যাবে"। আমারও কথাটা মনে ধরল। পরদিন কাজের ফাঁকে চুপিচুপি প্রিয়তোষ কে কথাটা বলতেই ও যেন হাতে চাঁদ পেল। খুবই খুশি হয়ে বলল,"এ তো খুবই ভালো প্রস্তাব, লোভনীয় তাতে সন্দেহ নেই, আমি যেখানে এখন থাকি তাকে ভদ্র পাড়া বলা চলে না,বুঝলে ভায়া কিছু চাষাভুসো খোট্টাদের বাস সেখানে। তারপর রাত্রিবেলা মাতাল হয়ে যা শুরু করে তাতে ঘুম তো দূরের কথা টেকা দায় হয়ে পড়ে"। আমি বাড়ি বদলানোর কথা বলতেই ও বললো,আজকে রবিবার, খুবই ভালো সময়। ওইদিন ছুটি আছে ফ...

আশা- রুদ্র দেবনাথ

কালোত্ব মাঝে সাদা আবছায়া নিঃসঙ্গ গ্রহচারী পৃথিবীর বুক আশ্রিত ছায়ামূর্তি তরুর ন্যায় জোছনাময় কুয়াশাগুমোট রাত নিথর পরশে দাঁড়িয়ে থাকে ।  অশ্রুসজল চোখ,   তারার জোনাক ঝলকানি ।  রাঙিত আকাশে শত সহস্র  কবির স্বপ্নজাল বোনা তখনও  থামে না, চলতেই থাকে....  তবু আনন্দ-বেদনায় উদ্বেলিত  ক্ষণিকের মলিন আকাশ কখনো কাউকে শব্দ তীরে  বিদ্ধ করে না ।  নিজ মধ্যে স্বল্পখসিত তারার  শোক ভুলে টানিত বুকে  বৃদ্ধ-শিশুর প্রেরণা জোগাতে সোনালী রবি'র প্রহর গুনতে থাকে । 

ডুব দে রে মন...- বন্যা ব্যানার্জী

ঝন ঝন শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো তারক নাথ ওরফে তারু র।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা আন্দাজ করে নিল সে। হুম ! মহারানীর মর্নিং ওয়াকে যাবার সময় এখন।তাই ঘুমন্ত বর কে চাবি ঝনঝনিয়ে জাগানোর চেষ্টা।সারাদিন অফিসে গাধার খাটনি,একটু যে আয়েশ করে রাতের ঘুম টুকু দেবে সে উপায় নেই।বৌ এখন গোটা দশেক মহিলা সমাবেশে আড্ডা দিতে বেরবেন। তারু ভালোই বোঝে এসব মর্ণিংওয়াকের মানে। তা যাবে যাওনা বাপু।তারু কোনদিন বাধা দিয়েছে নাকি বাধা দিলেই শুনবে!তারু পাশ ফিরে শুতে যাবার উদ্যোগ করতেই মধুর কন্ঠে কল্পনা বলল "এই শুনছো! শিবুর মা একটু পরেই আসবে,এসেই চা না পেলে ওর মাথা গরম হয়ে যাবে।আজ আমার ফিরতে দেরী হবে একটু।তোমাদের মত চা করে নিও। তারু ব্যাজার মুখে বলল  দেরী হবে কেন! শিবুর মায়ের জন্য ও চা করতে হবে নাকি! আমি না হয় গলির মুখে চায়ের দোকান থেকে... তারুর কথা শেষ হবার আগেই কল্পনার মিহি গলা কর্কশ হলো " কেন? একদিন চা করে খেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হবে? আর শিবুর মা কি মানুষ নয় নাকি? মনে রেখ ও যদি  চা না পেয়ে মাথা গরম করে আমিও কুরুক্ষেত্র বাঁধাবো। সারাটা জীবন তোমার সংসারেই তো হেঁসেল ঠেলে গেলাম।এই তো কদিন হলো একটু বাইরের মুখ দ...

পচন- মনোজ কুমার সরকার

  আজ যে কাহিনীর অবতারণা করতে চলেছি পাঠকের কাছে তা নিছক একটি গল্প হলেও আসলে আমার জীবনেই এই বিচিত্র ঘটনাটি ঘটেছিল। অন্তত সেদিন একবিংশ শতাব্দীর যুক্তিবাদী শিক্ষিত মানুষ হওয়া সত্বেও আমি এই ঘটনার জটিল রহস্যের কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। সেই বিচিত্র ঘটনার দর্শকের ভূমিকা নেওয়া ছাড়া সেদিন আমার আর কিছুই করার ছিল না। বছর দশেক আগের কথা। সেবার গ্রীষ্মের ছুটিতে গেলাম মামার বাড়ি বেড়াতে ।মা, বাবা, ভাই ও আমি অর্থাৎ সপরিবারে ।আমার মামাবাড়ী রানাঘাটে কাপাস ক্যাম্পের কাছাকাছি হরিনাথপুরে। হরিনাথপুর একটি ছোট কলোনি বিশেষ ।দেশভাগের পর বহু ছিন্নমূল মানুষ সেখানে পাকাপাকি তাদের বসতি স্থাপন করেছিল। দিদিমা প্রায়ই বলতেন এখানে আগে ছিল শুধুই জল কচুর বন আর আঁশ শেওড়ার ঝোপ। এমনকি আমি নিজেও ওই অঞ্চলে গিয়ে বেশ কিছু পরিত্যক্ত জলা জমি দেখেছি। প্রোমোটারের নেক নজরে পড়লে সেখানে হয়তো ফ্ল্যাটবাড়ি উঠতে পারত। এমনিতে হরিনাথপুর জায়গাটা আমার ভীষণ প্রিয়। আমরা কলকাতার মানুষ। গ্রামবাংলায় আসি একটু টাটকা বাতাসের খোঁজে, আর হরিনাথপুরে সেসব অফুরন্ত। এমন একটি চমৎকার জায়গায় এসে এত ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হবে যদি আগে জানতাম তাহলে সে...

আমাদের জীবনের দ্বীপ- বুলবুল মৈত্র

যাঁর ভাবনায় গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ এর অবাধ বিচরণ ছিল। তাঁর কথা বলতে গিয়ে গুরুদেবের কথাকে সামনে রেখে বলি--- "চিরবন্ধু চির নির্ভর চিরশান্তি তুমি হে প্রভু। " চলে গেলেন আমাদের পরিবারের সবার প্রিয় রাঙাকাকা। ১৯২৫সালের ১৮ইফেব্রুয়ারী জন্ম। আর ২০২০সালের ২৯আগষ্ট মৃত্যু।  জীবনের যবনিকা টানলেন ৯৫ বছর বয়সে।  আমাদের পরিবারের সকলের পথপ্রদর্শক ছিলেন আমাদের প্রিয় রাঙাকাকা।  আমরা হারালাম আমাদের রাঙাকাকা কে আর শান্তিপুর বাসী হারালেন শান্তিপুরের সুসন্তান কাশীকান্ত মৈত্রকে।  শান্তিপুরের আদি রূপকার পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্রের সুযোগ্য পুত্র কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী ও প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন কাশীকান্ত মৈত্র।  আমি বেশি রাজনৈতিক দিক বলব না।শুধু বলব, ২০১৩ সালে বঙ্গবিভূষণ সম্মান লাভ করেন।  হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি উত্তম মজুমদার জানিয়ে ছেন৬৮ বছরের ও বেশি সময় ধরে তিনি ওকালতি সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ক্ষতি হল আইন জগতের।  এত বড় মাপের মানুষ হয়েও তিনি অতি সাধারণ জীবন যাত্রা অতিবাহিত করতেন। এমন কি খাওয়া দাওয়া ছিল অতি সাধারণ। আমার জীবনে এত বড় মাপের ...